গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া »
ব্রিটিশ বাংলার রাজনীতি এক পর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়নি অর্থাৎ বিশ শতকের প্রথম তিন দশকে রাজনীতি ক্রমশই বিপ্লবাত্মক হয়ে ওঠে। স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিতে ছিল বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৫ ও পরে ১৯১১ সালে তা রদ হয়। প্রথম দুই দশকে অনুশীলন ও যুগান্তরের মাধ্যমে সারা বাংলায় গোপন বিপ্লবী তৎপরতা শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ প্রশাসনের ইংরেজ কর্মকর্তা, বিচারক, ভারতীয় বা বাঙালি পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লবীদের টার্গেটে পরিণত হয়। কলকাতা, ঢাকা , চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় বেশ কয়েকটি অপারেশন পরিচালনা করে বিপ্লবীরা। তবে সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ছিল সবচেয়ে আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কুমিল্লা শহরের বিপ্লবীরা একটি সফল অপারেশন পরিচালনা করে। প্রীতিলতা চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন যা অদ্যাবধি ইতিহাসের পাতায় তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে লেখা আছে।
কুমিল্লায় সংঘটিত ঘটনার নায়িকা ছিলেন দুজন কিশোরী। শহরের ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী স্কুলের সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শান্তি ও সুনীতি মেজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর দুজনেই কারাবন্দি হয় এবং বয়স কম হওয়ার কারণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়।
শান্তি ঘোষ (১৯১৬- ১৯৮৯) ও সুনীতি চৌধুরী (১৯১৭- ১৯৮৮) ছিলেন সিনিয়র বিপ্লবী অখিল নন্দীর ভাবশিষ্য। মূলত তার পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ তাদেরকে এই বিপ্লবী কাজে উৎসাহিত করে। যদিও অন্যান্য বিপ্লবীরা খুব আশাবাদী ছিলেন না। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে এই অপারেশন বাস্তবতা পায়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাঙলোতে এই দিনে তাদেরকে নিয়ে যায় বিপ্লবী অখিল নন্দী।
অত্যন্ত সফলভাবে তাদের মিশন শেষ হলে ও দুজনই ধরা পড়ে যায়। ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্স বাসভবনে থাকা চাপরাশী ও অন্যরা তাদের আটক করতে সমর্থ হয়। সবাই ভেবেছিল বিচারে তাদের প্রাণদণ্ড হবে। তা না হয়ে শাস্তি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। শান্তি ও সুনীতি দুজনেই পরবর্তীকালে কলকাতায় মুক্তি পান এবং বিলম্বে হলেও উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। সুনীতি হন ডাক্তার। দু জনেই রাজনীতি করেছেন এবং বিধান সভার সদস্য হয়েছেন।
গ্রন্থটিতে রয়েছে ছোট আকারের সতেরোটি অধ্যায়। এছাড়া কয়েকজন বিপ্লবীর জীবনী শেষে যোজিত আছে। রয়েছে কিছু আলোকচিত্র ও পরিশিষ্ট। নিয়মতান্ত্রিক ও প্রকাশ্যে রাজনীতির জন্য কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ রাজনৈতিকভাবে অগ্রণী হলেও সে সময়ে এই বিপ্লবী কন্যাদের ভূমিকাও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গ্রন্থটি রচনা করে লেখক শান্তি ও সুনীতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে সফলতার সাথে তুলে ধরতে পেরেছেন। আমি তাকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাই।
অগ্নি যুগের বিপ্লবী কন্যা শান্তি ও সুনীতি
ড. আলী হোসেন চৌধুরী
প্রকাশক : ঐতিহ্য, মূল্য – ২২৫ টাকা