সক্রিয় সন্ত্রাসী গ্রুপ

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

দীপন বিশ্বাস, কক্সবাজার »
ধীরে ধীরে ফুঁসে ওঠছে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহ হত্যার পর ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। খুন, হত্যা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধে ক্যাম্পজুড়ে বিরাজ করছে অস্থিরতা। আল-ইয়াকিন, আরসাসহ বেশ কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। বেশ’কটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রাত হলেই ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এতে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতংক দেখা দিয়েছে। রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন না থাকায় সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গারা। তবে সন্ত্রাসীদের ভয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দারা এই বিষয়ে কথা বলতে চান না এবং দেন না কোনও অভিযোগ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য কিংবা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিনিয়ত সংঘর্ষ ও নানা অপরাধ লেগে থাকার ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে বসবাসরত স্থানীয়রাও আতঙ্কের মধ্যেই রয়েছেন। রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল ছোড়া ও গোলাগুলির কারণে অনেক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে, গত শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসা’য় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন সাতজন রোহিঙ্গা। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত আরো ৭/৮জন রোহিঙ্গা।
সূত্র জানায়, উক্ত মাদ্রাসায় ট্রেনিং সেন্টার করতে চেয়েছিল একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ। একইসঙ্গে ওই গ্রুপটিতে মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যোগ দেওয়ারও চাপ ছিল সন্ত্রাসীদের। এ জন্য প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকিতে আতংকে ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমনটি অভিযোগ করছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহতের স্বজন ও সাধারণ রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের পাশে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দা মো. মঞ্জুর বলেন, ‘রোহিঙ্গা আসার পর থেকে আমরা শান্তিতে নাই। মানবিক কারণে এদেশে তাদের স্থান দেওয়া হলেও এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। প্রতিনিয়ত তাদের হুমকি-ধামকিতে রয়েছি আমরা। এমনকি তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, গোলাগুলির বিকট শব্দে আমাদের ছোট ছোট ভাই বোন ও ছেলে মেয়েরা ভয় পায়। সব মিলিয়ে আতঙ্কের মধ্যেই আমাদের দিন যাচ্ছে।’ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগলে আমার ঘরটিও সম্পুর্ণ আগুনে ভস্মীভূত হয়। এত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও কোন সাহার্য্য সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। আমার জমির অর্ধেকেরও বেশি ভূমি রোহিঙ্গাদের দখলে।
কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দা জামাল হোসাইন বলেন, ‘আমার বাড়ি কাঁটাতারের বাইরে। অথচ এখানে এসেও রোহিঙ্গারা নানা মাস্তানি করে। গাছ থেকে নারকেল, সুপারি, ক্ষেত থেকে নানা শাক-সবজি নিয়ে যায়। হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায়। আমরা কিছু বললে বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে। বলতে গেলে তাদের কাছে আমরা অসহায়। রাতদিন তাদের মারামারি, মুখোমুখি সংঘর্ষ আমাদের আতঙ্কে রাখে।’
তিনি আরও বলেন, মাঝে মধ্যে মনে হয় তারা যেকোনো মুহূর্তে আমাদের ওপরও সন্ত্রাসী হামলা করতে পারে। তাই তাদেরকে আয়ত্তে রাখা দরকার।’
উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অপরাধ, চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম, মাদক পাচার ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপর্কমের সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তারা দিনের পর দিন স্থানীয়দের উপর হামলা করছে। তাদের হাতে খুন হয়েছে স্থানীয় অনেক লোকজন। স্থানীয়দের গুম করে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে তারা। এমনকি ক্যাম্পে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ক্ষতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। এক কথায় তাদের কাছে স্থানীয়রা নিরাপদ নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে ক্যাম্পগুলোর আশেপাশে স্থানীয়দের বসবাস অযোগ্য এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।’
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক অর্থনৈতিক কারণে প্রতিনিয়ত তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যাক, এটাই কামনা স্থানীয়দের।