হেফাজতে চরম অস্থিরতা

মধ্যরাতে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তের ৩ ঘণ্টা পর ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা
আল্লামা শফীর নীতি আদর্শের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে: মাঈনুদ্দীন রুহী

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী <
নানা বিতর্ক, হামলা-তাণ্ডবের চরম সমালোচনা, নেতাদের গ্রেফতার এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের পদত্যাগে চরম অস্থির হয়ে ওঠেছে হেফাজতে ইসলাম। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি প্রায় মধ্য রাতে বিলুপ্ত ঘোষণার ৩ ঘণ্টা পর ভোররাতে ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপদেষ্টা কমিটির পরামর্শে ৫ সদস্যের এ কমিটি করা হয়।
হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘রাতে হেফাজতের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার কথা জানিয়েছেন। তিনি সেই দায়িত্ব আমাকে পালনের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশমত উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তমতে হেফাজতের আগামীর সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করছি।’
কমিটিতে প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং সদস্যসচিব হিসেবে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। সদস্য মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী ও দেওয়ান পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান।
এদের মধ্যে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ও জুনায়েদ বাবুনগরী ফটিকছড়ির সন্তান ও আপন মামা-ভাগিনা। নুরুল ইসলামসহ এ তিনজন হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটিতে একই পদে ছিলেন। এদিকে সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম ঢাকার, সদস্য মিজানুর রহমান গাজীপুরের এবং বাকি তিনজন শুধু চট্টগ্রামের তা নয়, সবাই ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা।
সদ্যবিলুপ্ত কমিটির কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরিস সুপ্রভাতকে বলেন, ‘এই কমিটি অতি দ্রুত হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবে।’
এর আগে, রোববার রাত সাড়ে ১০টার পর সাড়ে চার মাসের মাথায় ভেঙে দেওয়া হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটি। ভিডিও বার্তায় জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন, ঈমান আকিদার সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। কেন্দ্রীয় কমিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের পরামর্শক্রমে এ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।’
গত ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির নির্বাচিত হয়েছিলেন হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছিলেন ঢাকার জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও হেফাজতের ঢাকা মহানগর শাখার আমির নূর হোসাইন কাসেমী, তিনি পরে করোনায় মারা যান।
এদিকে হেফাজতের কমিটির ভাঙার পরপরই ফেসবুক বার্তায় প্রথম কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী ঘোষণা দিয়েছেন আল্লামা আহমদ শফীর নীতি আদর্শের হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন তারা। এক ভিডিও বার্তায় প্রথম কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তথাকথিত হেফাজতে ইসলামের কাউন্সিলের মাধ্যমে সিন্ডিকেট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যে অবৈধ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমি বারবার অনেক লাইভে এসে বলে এসেছিলাম। এটা একটা অবৈধ কমিটি, সিন্ডিকেট কমিটি। এটা একটা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাস এবং হেফাজতের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে বিসর্জন দিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তথাকথিত সম্মেলনের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠনের সাড়ে চার মাসের মাথায় এসে দুঃখজনকভাবে হলেও সত্যি বাস্তবতাকে উপলব্ধি করে এ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে। এ কমিটিকে বিলুপ্তি ঘোষণা করেছেন কমিটির আমির সাহেব।’
বাবুনগরীর বিরোধী পক্ষের প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত হেফাজতের এক সময়ের প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, ‘যে হেফাজতে ইসলামের কমিটি আমাদের পূর্বপুরুষরা যেভাবে ইসলামের ভাবধারা, ইসলামের ভাবগম্ভীর্যকে সংরক্ষণ করেছেন সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা হেফাজতের ইসলামের কমিটি শিগগিরই পুনর্গঠন এবং সংস্কার করব।