স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া অচেনা আমির হামজার বিষয় খতিয়ে দেখবে সরকার

সুপ্রভাত ডেস্ক »

দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য আমির হামজার নাম ঘোষণার পর বিতর্ক ওঠায় তা পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

‘জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র আহ্বায়ক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, তারা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবেন।

পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগও রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত ১৫ মার্চ সরকার এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে। তাতে সাহিত্যে প্রয়াত আমির হামজার নাম আসে।

নাগরিক মহলে অচেনা আমির হোসেনের নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন।

খবর নিয়ে ‘বাঘের থাবা’, ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ ও ‘একুশের পাঁচালি’ নামে তার তিনটি বইয়ের হদিস পাওয়া যায়।

জন্মস্থান মাগুরায় তাকে ‘চারণ কবি’ হিসেবে চিনতেন অনেকে। কেননা তিনি গানের আসরে বসে গান লিখতেন, সুর করতেন।

নির্বাচনে আমির হামজা আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন বলে স্থানীয়দের কথায় উঠে আসে।

সেই সঙ্গে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে, ১৯৭৮ সালে একটি খুনের মামলার প্রধান আসামি ছিলেন আমির হামজা। বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরবর্তীতে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ সাধারণ ক্ষমা পান তিনি।

আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা। খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন তিনি।

২০১৯ সালে মারা যাওয়া আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা ছেলের তৎপরতার কথাও আসে সংবাদ মাধ্যমে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, “আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মতামত। আমি খতিয়ে দেখি সেগুলো সঠিক অভিযোগ কি না।

“যেমন- মার্ডার, এগুলোরর সাথে সম্পৃক্ত কি না? তার সাহিত্যকর্ম কী আছে, সেগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখব।”

এর আগে ২০২০ সালে সাহিত্যে এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছিল।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা রইজ উদ্দিনের নাম ঘোষণা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছিল সাহিত্যিকদের মধ্যে।

সোশাল মিডিয়ায় বিভিন্ন জনের সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি টেলিভিশন টক শোর আলোচনার বিষয়বস্তুও হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

সমালোচনার মুখে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে রইজকে বাদ দিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তখন রইজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “কেন দিল, কেনই বা কেড়ে নিল!”

স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের সাধারণত ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।

রইজ উদ্দিনের মতো আমির হামজার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, “হ্যাঁ, তা তো আছেই।”

রইজ উদ্দিনের পর আমির হামজার নাম দেখে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ জাতীয় পদকের জন্য আমলানির্ভর মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

যেভাবে দেওয়া হয় স্বাধীনতা পুরস্কার

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার দেওয়ার জন্য রয়েছে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত নির্দেশাবলী’, যা সর্বশেষ ২০১৯ সালে সংশোধন করা হয়েছিল।

সেখানে বলা হয়, “স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বিধায় এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচনকালে দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রাখিয়াছেন, এমন সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হইবে।”

নির্দেশাবলিতে রয়েছে, পুরস্কারের সংখ্যা সাধারণভাবে কোনো বছর ১০টির বেশি হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে সংখ্যা বাড়ানো কিংবা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

পুরস্কারের পদ্ধতি বর্ণনা করে নির্দেশাবলিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে এবং এর আগে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছে চিঠি পাঠাবে।

“মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহ নিজ নিজ কার্যসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য এবং ইতঃপূর্বে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তগণ নির্ধারিত যে যে কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করিতে পারিবে/পারিবেন।”

এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে পাওয়া নামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করবে ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি’। যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তাব জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়।

নির্দেশিকায় বলা হয়, মন্ত্রণালয় বা বিভাগের থেকে প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন।

এ বছর আমির হামজার নাম সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করেছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, যা তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বীকার করেছেন।

বাণিজ্য সচিব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্য এবং জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ‘সহায়তাদানকারী’ কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত।

সূত্র : বিডিনিউজ