সেবার মাশুল পুনর্নির্ধারণ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক


সুপ্রভাত ডেস্ক

বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে হিসাব খোলা ও রক্ষণাবেক্ষণ, আমানত, ঋণ প্রদান, রেমিটেন্সসহ অন্যান্য সেবার বিনিময়ে ব্যাংক মাশুল বা চার্জ ও কমিশন হিসেবে গ্রাহকের কাছ থেকে কত টাকা নিতে পারবে সেটা বলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব নির্দেশনা ‘অবিলম্বে’ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এতে বিভিন্ন সময়ে জারি করা সব প্রজ্ঞাপনকে এবার একত্রিত করে একটির মধ্যে আনা হয়েছে।

‘দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনায়’ আগের নির্ধারিত হার পুনঃবিশ্লেষণ করে নতুনভাবে নির্ধারণ ও পরিপালনের জন্য আগের সব নির্দেশনা একত্রে দেওয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমানত সংক্রান্ত হিসাব খোলা

এখন যে কোনো ব্যাংক ৫০০ টাকায় খোলা যাবে সঞ্চয়ী হিসাব। ১০০০ টাকায় খোলা যাবে চলতি হিসাব।

তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জমার বাধ্যবাধকতা রাখা যাবে না।

এখন নতুন হিসাব খোলার জন্য অনেক ব্যাংক নিজেদের মত করে ন্যুনতম অর্থ জমা দেওয়ার নিয়ম ঠিক করে রেখেছে।

কোনো কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা ২ বা ৫ থেকে শুরু করে ৫০ হাজার কিংবা ১০ লাখ টাকাও নির্ধারণ করা রয়েছে।

কিছু ব্যাংকে অবশ্য ৫০০ টাকাতেও  হিসাব চালু করা যায়।

হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি 

এসব ফি ব্যাংক ছয় মাস অন্তর গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করতে পারবে।

কোন সঞ্চয়ী হিসাবে ১০ হাজার টাকা স্থিতি থাকলে কোনো হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি নেওয়া যাবে না।

গড়ে ১০ হাজার টাকার পর থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত স্থিতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত টাকা নিতে পারবে ব্যাংকগুলো।

১০ লাখ টাকার বেশি গড় আমানত স্থিতিতে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা নেওয়া যাবে।

চলতি হিসাবে প্রতি ষান্মাসিকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি নেওয়া যাবে।

তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাবে কোনো প্রকার হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় করা যাবে না।

অন্য শাখায় হিসাব স্থানান্তর

একই ব্যাংকের অন্য শাখায় হিসাব স্থানান্তরের ক্ষেত্রে একই জেলায় হলে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা

এবং অন্য জেলায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা ফি আদায় করা যাবে।

অ্যাকাউন্ট সচল করার ক্ষেত্রে কোনো ফি আদায় করা যাবে না।

হিসাব বন্ধকরণ ফি

হিসাব বন্ধ করতে সঞ্চয়ী হিসাবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা, চলতি হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা এবং এসএনডি হিসাবে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা আদায় করা যাবে।

এ ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাব থেকে কোন ফি আদায় করা যাবে না।

অন্যান্য ফি

বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবে আরোপিত ন্যূনতম ব্যালেন্স ফি, ইনসিডেন্টাল চার্জ, লেজার ফি, সার্ভিস চার্জ, কাউন্টার ট্রানজেকশন ফি বা অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না।

‘বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাব’ বলতে এখানে দেশের আর্থিক সেবাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে

কৃষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দুঃস্থসহ পথশিশু ও স্কুল ব্যাংকিং হিসাবসহ বিভিন্ন সময়ে বিশেষ হিসেবে চিহ্নিত হিসাবকে বোঝাবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঋণ প্রদান সংক্রান্ত

ঋণ প্রসেসিং ফি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে মোট মঞ্জুরী করা ঋণের সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ আদায় করা যাবে, তবে এর পরিমাণ ১৫ হাজার টাকার বেশি হবে না।

৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণের ক্ষেত্রে এই হার হবে সর্বোচ্চ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পরিমাণ ২০ হাজার টাকার বেশি হবে না।

ঋণ আবেদন ফি নামে কোনো ফি আদায় করা যাবে না।

রপ্তানি ঋণসহ যে কোনো ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে সুদ বা মুনাফা হারের অতিরিক্ত কোনো সার্ভিস চার্জ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ফি, মনিটরিং বা সুপারভিশন চার্জ, ঝুঁকি প্রিমিয়াম বা অনুরূপ অন্য যে কোনো নামে অতিরিক্ত কোনো চার্জ, ফি, কমিশন আরোপ বা আদায় করা যাবে না।

গ্রাহক ঋণ নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে পরিশোধ করতে চাইলে বকেয়া ঋণের সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ ফি আদায় করা যাবে।

তবে, কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে প্রদত্ত ঋণ এবং চলতি ঋণ বা ডিমান্ড লোনের ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির আগে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে অনুরূপ ফি আদায় করা যাবে না।

আগে ব্যাংকগুলো ঋণের টাকা কেউ আগে ফেরত দিতে চাইলে বাকি টাকার উপর ২ শতাংশ পর্যন্ত ফি রাখত।

এছাড়া সার্কুলারে স্থানীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্য, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত হিসাব, চেক ফেরত, সব ধরনের সনদ, ডিমান্ড ড্রাফট, পে অর্ডারসহ সব ধরনের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক ঘোষিত বা প্রকাশিত তালিকার বাইের কোনো মাশুল বা কমিশন নিতে পারবে না।

সূত্র : বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম