সেতু হয়ে মাওয়ার পথে চলল প্রথম ট্রেন

ভাঙ্গা থেকে পদ্মা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

অবশেষে পদ্মা সেতুর রেললাইন দিয়ে চলল ট্রেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের প্রায় নয় মাস পর এই মাইলফলক রচিত হলো। যদিও বাণিজ্যিকভাবে এ পথ দিয়ে রেল চলাচলের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বুধবার দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উৎসবমুখর পরিবেশে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনে এই রেলযাত্রার উদ্বোধন করেন। খবর বিডিনিউজের।

দুপুর ১টা ২১ মিনিটে সাত বগির একটি বিশেষ ট্রেন ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া স্টেশনের দিকে রওনা দেয়। ট্রেনটির চালকের আসনে ছিলেন রেলওয়ের লোকোমোটিভ মাস্টার (এএলএম) রবিউল আলম।

যাত্রা শুরুর আগে রেলমন্ত্রী সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বপ্ন একটা একটা করে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন; তারই অংশ হিসেবে আজ এই ট্রায়াল ট্রেন চলছে।

‘আগামী সেপ্টেম্বরে ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে এবং তার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরাই রেলকে যশোর পর্যন্ত নিয়ে যাব। তবে তার জন্য আমাদের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’

এ সময় পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার সাইদ আহমেদ বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ শুরু করতে আমাদের তিন মাস দেরি হয়েছিল। তারপরেও সময়মতো কাজ শেষ করতে পারায় আমরা আনন্দিত। এরই মধ্যে আমাদের এই অংশের কাজের ৯২ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ প্রকল্প মেয়াদের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’

দক্ষিণ বাংলার ২১ জেলার বাসিন্দাদের কাছে স্বপ্ন ছিল পদ্মা সেতু। গত বছর ২৫ জুন সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মঙ্গলবার তার সঙ্গে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় রচিত হলো ট্রেন চালুর মাধ্যমে।

উদ্বোধনের সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাক, মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন, সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি, আবদুস সোবহান গোলাপ।

এ ছাড়া ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনের পর আমেরিকার তৈরি ইঞ্জিন আর চীনের তৈরি সাত বগির বিশেষ ট্রেনে করে মাওয়া প্রান্তে যাত্রা শুরু করেন রেলমন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিরা। এই ট্রেনটির সামনে ছিল ‘গ্যাং কার’।

ভাঙ্গা স্টেশন হতে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই পথ অতিক্রম করে ট্রেনটি। পরে আবার ট্রেনটি মাওয়া থেকে ভাঙ্গায় ফিরে যাবে।

ভাঙ্গা হতে পদ্মা সেতু হয়ে মাওয়া পর্যন্ত চারটি স্টেশন ও একটি জংশন স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ভাঙ্গা স্টেশন, ভাঙ্গা জংশন স্টেশন, শিবচর স্টেশন, পদ্মা স্টেশন ও মাওয়া স্টেশন।

উদ্বোধনী ট্রেনটি যাত্রাপথে শিবচর ও পদ্মা স্টেশনে বিরতি দেয়।

তারপর পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর ও মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারে আতশবাজি ফাটিয়ে ট্রেনকে স্বাগত জানানোর কথা।

লোকোমোটিভ মাস্টার (এএলএম) রবিউল আলম (৪৩) সোমবার রাতেই এই বিশেষ ট্রেনটি সৈয়দপুর থেকে ঈশ্বরদী, পোড়াদাহ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর হয়ে ভাঙা স্টেশনে নিয়ে আসেন।

রবিউল আলম বলেন, ‘পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথম ট্রেন চালাচ্ছি। বিষয়টা ভাবতে সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে।
‘এক সপ্তাহ আগে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায়। তারপর থেকেই এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এটি আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া।’