সিলভার স্ক্রিনে ‘প্রহেলিকা’ টিম

হুমাইরা তাজরিন »

আগাগোড়া রহস্যে মোড়া সমাজের বঞ্চিত অবদমিত নারী-পুরুষের জীবনের গল্প নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘প্রহেলিকা’। চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালনায় ঈদুল আযহায় মুক্তি পাওয়া ‘প্রহেলিকা’ চলচ্চিত্রটি এরই মধ্যে সাড়া ফেলেছে। চলচ্চিত্রটির প্রচারণার অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যায় নগরের ফিনলে স্কয়ারের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে হাজির হয় ‘প্রহেলিকা’ টিম। যেখানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রটির পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী, অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ, অভিনেত্রী শবনম বুবলি এবং চলচ্চিত্রটির গীতিকার আসিফ ইকবাল। সেখানে সুপ্রভাত প্রতিবেদকের সঙ্গে চলচ্চিত্র বিষয়ে কথা বলেন তারা।

গীতিকার আসিফ ইকবাল
গান ভালোবাসি। গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করা আমাকে আলোড়িত করে। যেকোনো সিনেমার চিত্রনাট্য হলো ঐ সিনেমার মূল। সিনেমাটাকে বোঝার চেষ্টা করি, যারা অভিনয় করছে তাদের চরিত্রটাকে বোঝার চেষ্টা করি, সুরকার কি চাইছেন, পরিচালকের চাহিদা কি সেটা মাথায় রাখি। গানটা লিখতে আমাদের কাজ হচ্ছে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে লেখা। যেমন প্রহেলিকার চিত্রনাট্য আমি প্রায় ১৪ বারের থেকেও বেশি পড়েছি। আমি জানি যে, প্রহেলিকার চরিত্ররা একটা বদ্ধ জায়গায় দমবদ্ধ অবস্থায় আছে, সুতরাং তাদের ভালোবাসার কল্পনাটা হবে বিস্তৃত, সে কারণে সেখানে গানের কথায় এসেছে ‘মেঘের নৌকা তুমি তোমায় ভাসাবো আকাশে।’ আবার ‘আমিতো নিজে এসেছি যেচে’ একটা কঠিন পরিস্থিতি, সেখানে দুজনের অপ্রাপ্তি, টানাপোড়েন এ সমস্ত কিছুকে মিলিয়ে গানটা লিখেছি। ‘এজন্যই হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে যারা, ভালোবেসে মরে যায় তারা’ লাইনগুলো ব্যবহার করেছি। যতই কাজই করিনা কেন বিনয়ে অবনত থাকি। যেহেতু আমি মার্কেটিংয়ের লোক, মানুষের সাথে সংযুক্ত থাকতে পছন্দ করি, আন্তরিকতার সাথে মিশি, তাই আমার গান তাদের কানেক্ট করে। সামনে ‘যাপিত জীবন’ নামে হাবিবুল ইসলাম হাবিবের একটা চলচ্চিত্রে সবকটা গান আমি লিখছি।

মাহফুজ আহমেদ
আমরা বাঙালি, বাংলাদেশের মানুষেরা অনেক বেশি অবদমন করে। অর্থাৎ আমরা যা ভাবি, আমরা যা চাই, আমরা তা করতে পারিনা। সে কারণে আমাদের নানাবিধ সমস্যা। এমনকি আমাদের পরিবারিক যে বেড়ে ওঠা, সেই পরিবার থেকেই এ অবদমনের শুরু। পাশ্চাত্যের সাথে আমাদের অনেক বেশি অমিল এবং এগুলো যখন আমরা পার হয়ে আসি, তখন দেখা যায়, আমরা আমাদের জীবনের অনেক সুন্দর সময় নষ্ট করে ফেলেছি। মূলত এসব বিষয় ‘প্রহেলিকায়’ উঠে এসেছে।

শবনম বুবলি
অর্পার যে অবস্থান চলচ্চিত্রে। বাস্তবে নারীদের অবস্থান এর চেয়ে ভিন্ন নয়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা এখনও ঐ জায়গায় পৌঁছায়নি। যখন কোনো নারী আওয়াজ তুলতে চায় সেখানে অনেক রকম স্ট্রাগল থাকে। অর্পা চরিত্রটি যখনই তার মতো করে বাঁচতে চেয়েছে, তখনই সে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সমাজব্যবস্থা কিন্তু এখনও এরকমই। যখন আমাদের পুরুষেরা নারীদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, আমাদের সমাজব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।

চয়নিকা চৌধুরী
‘প্রহেলিকায়’ অর্পার যে চরিত্র সেটার যে পরিণতি, অবস্থান, এটা ফুটিয়ে তোলাও একটা প্রতিবাদ। পুরো চলচ্চিত্রে আমরা নারীর যে অবস্থান, মানুষের অবদমন জনিত যে বিকৃতি সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি। কিছু কিছু পুরুষ সাথে থাকলেও মন থেকে সাপোর্ট দেয়না। একটা ডমিনেটিং ভাব থাকে। এমনকি যে চলচ্চিত্রগুলোতে নেতিবাচক নারী চরিত্রকে প্রধান করা হচ্ছে সেগুলোর নির্মাতাও দেখবেন পুরুষ।

যতদিন পর্যন্ত এ বিষয়গুলো যাবেনা, যতদিন পর্যন্ত একজন নারী তার বাবা ভাই সর্বোপরি পরিবারের কাছে সম্মানিত না হবে, ততদিন বেশি সংখ্যক নারীদের অবস্থান বিশেষ পরিবর্তন সম্ভব না। আমি চয়নিকা চৌধুরী আজকের অবস্থানে আসার পেছনে আমার পরিবারের সাপোর্ট ছিলো। সবাই তো চয়নিকা চৌধুরীর মতো বাড়ি থেকে সার্পোট পায়না। আমি অচিরেই নারী চরিত্র প্রধান সিনেমা করবো যেখানে নারীর অবস্থান থাকবে শক্তিশালী।