সামাজিক দূরত্ব রক্ষা হচ্ছে না

নগরীতে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ভ্যানগাড়ি থেকে পণ্য কেনাবেচা -সুপ্রভাত

রুমন ভট্টাচার্য :
করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সামাজিক দূরত্বসহ স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার শর্তে জীবন বাঁচাতে জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবকিছু খুললেও রাস্তা ও বাজারসহ অধিকাংশ স্থানে শর্তের কিছুই মানা হচ্ছে না। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তারাও বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন সামাজিক দূরত্বের কথা।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এর ফলে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
রোববার (২১ জুন) নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, করোনাকালের আগের কর্মচাঞ্চল্য না ফিরলেও গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় বহুগুণ বেশি মানুষ রাস্তায় নেমেছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কের পাশে ফুটপাতে ও রাস্তায় ফের বসেছে দোকান ও সারি সারি ভ্যানগাড়ি। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গণপরিবহনের জন্য যাত্রীর অপেক্ষাও ছিল চোখে পড়ার মতো। অ্যাপে গাড়ি, মোটরসাইকেল ভাড়া বন্ধ থাকলেও রাস্তায় চুক্তিতে যাত্রী বহন করছে মোটরসাইকেল।
রোববার সকাল ১০টায় চকবাজার এলাকায় দেখা গেছে, রাস্তার দু’পাশে ভ্যানগাড়ির সারি ও ফুটপাতে দোকান। সামাজিক দূরত্ব না মেনে অনেকে ভ্যানগাড়ি থেকে পণ্য কিনছেন। একজন আম বিক্রেতাকে ঘিরে আছে ৫-৬ জন। বাজারের প্রবেশ মুখে চলছে মাছ বিক্রি। কাঁচাবাজারের পেছনে হাসমত উল্লাহ মুন্সেফ লেইনে মুদি দোকানের বাইরে মানুষের ভিড়। ডিসি রোড ও দেওয়ানবাজার এলাকায়ও মানুষের চলাচল ছিল লক্ষণীয়।
দেওয়ান বাজারে ভ্যান থেকে সবজি কিনতে আসা সুলতান আহমেদ নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আসলে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই পথ চলবো এমনটা ভেবেই বাসা থেকে বের হই। কিন্তু ভিড়ের মধ্যে থাকতে থাকতে কখন যে পাশাপাশি হয়ে যাই, সেটাই বুঝতে পারি না। আমি ঠিক থাকলেও অন্যজন হয়তো ঠিক থাকছে না। তখন বিষয়টা পাশাপাশি হয়ে যায়।’
সকাল পৌনে ১১ টায় বহদ্দারহাট মোড়ে দেখা যায় গাড়ির জন্য অপেক্ষারত মানুষ। এ সময় একটি ১০ নম্বর বাস আসতেই দেখা গেল কার আগে কে উঠবে এমন প্রতিযোগিতা। মোড়ের অপরপ্রান্তে কয়েকটি মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে লোক তোলা হচ্ছে। টেম্পুগুলোর কোনটিতে ৮জন, কোনোটিতে ৬ জন এবং চালকের সামনে দু’জন করে বসানো হচ্ছে। মোড়ের টেম্পুগুলো আগেরমত যাত্রী নিয়েই ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে।
সকাল ১১টা ১০ মিনিটে মুরাদপুর দেখা গেল একটি বেসরকারি ব্যাংকের বাইরে গ্রাহকের লম্বা লাইন। কারো সাথে কারো নেই নিরাপদ দূরত্ব।
ব্যাংকের লাইনে দাঁড়ানো মো. সোহেল বলেন, ‘সামাজিক দূরত্বে সবজায়গায় মানা হয়ে উঠে না। যেমন জায়গার স্বল্পতার কারণ এখানে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। যেখানে ২০ জন মানুষ দাঁড়াতে পারবে সেখানে যদি ৫০ জন হয়ে যায় তাহলে কিভাবে মানা সম্ভব? আমার জায়গায় আমি সচেতন হলে কী হবে যদি অন্যজন যদি অসচেতন থাকে।’
সকাল সাড়ে ১১টায় দু’নম্বর গেট ও বেলা ১২টায় জিইসি মোড়ে দেখা গেল রাস্তায় মানুষের ভিড়। রাস্তার পাশে ফুটপাতে হকারদের ঘিরে জটলা, চলছে বেচাবিক্রি।
জিইসি মোড়ে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। এখন প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে অফিস শুরু ও শেষের সময়ে।’
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবকিছু চলছে অনিয়ন্ত্রিতভাবে। সড়ক, পরিবহন, বাজার, দোকান মার্কেট, কোথাও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির কিছুই মানা হচ্ছে। একজন মানুষ যদি প্রতিদিন গণপরিবহণে অফিসে আসা-যাওয়া করে তাহলে তিনি কীভাবে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করবেন? এভাবে কোনোদিনও হবে না। সবখানেই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সুুপ্রভাতকে বলেন, ‘কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব মানছে না মানুষ। বাইরে বের হলেই সবাই বিষয়টি ভুলে যায়। মানুষ পরস্পরের সংস্পর্শে আসলে রোগটির সংক্রমণ আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে। কারণ রোগটি ছোঁয়াচে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’ বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক পরে বের হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।