চট্টগ্রামে মেট্রো রেল করে দিতে এবার দক্ষিণ কোরিয়াও আগ্রহী

সুপ্রভাত ডেস্ক »

চীনের পর এবার চট্টগ্রামে মেট্রো রেল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, যা ইতিবাচকভাবে নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে ভাবছে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ)। আগে শুধু মেট্রো রেলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলে কোরিয়া।

দেশটি একইসঙ্গে মীরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানির চাহিদা পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ, পিপিপি পদ্ধতিতে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং গুলশান-বনানী এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার উন্নয়নের প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাবও দিয়েছে।

সিউলে গত ২ মার্চ বাংলাদেশ-কোরিয়া যৌথ পিপিপি প্ল্যাটফর্মের চতুর্থ সভায় এসব প্রকল্পের বিষয়ে প্রস্তাব দেয় দেশটি।

একই সঙ্গে সভায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘পূর্বাচল নিউ টাউন ইলেকট্রিকাল ডিস্ট্রিবিউশন লাইন’ প্রকল্পটি পিপিপি প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে দেশটি।

ওই সভায় অংশ নেওয়া পিপিপিএ এর মহাপরিচালক আবুল বাশার বলেন, মেট্রো রেল নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার এই আগ্রহ ইতিবাচক। এখন পরবর্তী করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

পিপিপি প্ল্যাটফর্মে জি টু জি (গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট) পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে সেদেশের পক্ষ থেকে আগ্রহ প্রকাশ করতে হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এখন ঢাকায় মেট্রো রেলের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ডিএমটিসিএলকে (ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড) এই আগ্রহের বিষয়ে জানানো হবে। এ বিষয়ে তাদের পরামর্শ নেওয়া হবে।

“এরপর তাদের (দক্ষিণ কোরিয়া) জানানো হবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোন সংস্থা এ বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে। তখন তারা ওই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং সেদেশের বিনিয়োগকারী নির্বাচন করবে। এটাই প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়াতে পিপিপি প্রকল্প আগায়।”

এ প্রস্তাবের আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তখন এ কাজে তারা ৫০ লাখ ডলার অনুদান হিসেবে দিতে চেয়েছিল। এবার তারা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিল।

কোনো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে এর দৈর্ঘ্য, খরচ, কোন কোন পথে যাবে, কত বছরে নির্মাণ হবে- এসব বিষয় নির্ধারিত হয়।

পিপিপিএ এর মহাপরিচালক বলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই হলেই বলা সম্ভব কিভাবে, কী হবে। এখন তারা শুধু আগ্রহ জানিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে।

পিপিপিএ, কোরিয়া ওভারসিস ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (কেআইএনডি) ও কোরিয়া সরকার যৌথভাবে সিউলে ওই সভার আয়োজন করে।

সভার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জানানো হয়, সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পিপিপিএ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুলতানা আফরোজ।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান আমিন উল্লাহ নুরী, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী, বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমুল আবেদীন, পিপিপিএ এর মহাপরিচালক আবুল বাশার।

সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বেশ কিছু বড় পরিসরের প্রকল্পে কাজ করছে এবং বাংলাদেশ সরকার এখন কোরিয়ান বিনিয়োগকারীদের বড় বড় অবকাঠামোগত বিনিয়োগ প্রকল্পে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানাচ্ছে।

সভায় কোরিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেন মিনিস্ট্রি অব ল্যান্ড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ট্রান্সপোর্টের উপমন্ত্রী সেং ওউন এয়ং। বক্তব্য রাখেন কেআইএনডি এর প্রধান নির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট কেয়ং হওন লি।

এর আগে চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি নিজেদের খরচে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নের একটি প্রস্তাব দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ)। বিনিময়ে মীরসরাইয়ের কাছে সাগর থেকে উদ্ধার করা ৬০ বর্গ কিলোমিটার জমিতে তারা একটি স্মার্ট সিটি বানিয়ে সেখান থেকে লভ্যাংশ নেওয়ার প্রস্তাব করে।

পাশাপাশি মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইও নিজেদের খরচে করার প্রস্তাবও দেয় চীনা কোম্পানিগুলো।

সিডিএ প্রস্তাবের বিষয়টি জানানোর পর, গত ২২ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করে।

এছাড়া গত ১৩ জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

মেট্রো রেল নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাসস্থান ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনসালট্যান্টস লিমিটেডের মাধ্যমে একটি প্রাকযোগ্যতা সমীক্ষা করেছিল।

ওই প্রতিবেদনে বন্দরনগরীতে মেট্রোরেলের তিনটি র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইনের প্রস্তাব করা হয়, যাতে ব্যয় ধরা হয় আনুমানিক ৮৬ হাজার কোটি টাকা।

তবে নগরীর জনবহুল কয়েকটি অংশে মাটির নিচ দিয়ে মেট্রো রেল নেওয়ার প্রস্তাবও আসে ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক সভায়। এতে খরচ কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলে জানানো হয়।

বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে কিছুটা দূরে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর, কর্ণফুলী টানেল, টানেলের ওপারে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর ও জ্বালানি হাব ঘিরে ভবিষ্যত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে চট্টগ্রামে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বাড়বে।

সেসব বিষয় মাথায় রেখে গত ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে চট্টগ্রামেও মেট্রোরেল নির্মাণের নির্দেশ দেন।

পরে নগরীতে তিন থেকে চারটি রুটে মেট্রো রেল করে এ নেটওয়ার্কে মিরসরাই শিল্প নগর, বিভিন্ন শিল্প এলাকা ও নগরীর উপকণ্ঠের গ্রোথ সেন্টারগুলোকে সংযুক্ত করার পরামর্শ আসে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

সূত্র : বিডিনিউজ