সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা : যত টিকা লাগে, কিনবে সরকার

দেশের উত্তরাঞ্চলে বিগত কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি ও মৃত্যুর কারণে সরকার ১ জুলাই থেকে সাতদিনজুড়ে দেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করেছে। এই বিশ্ব বিস্তৃত অতিমারি ঠেকাতে পুলিশ-আনসার-বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে রাজশাহীতে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশের কয়েকটি জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নে সবাইকে বাসায় অবস্থান করতে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সরকারের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয় একই সঙ্গে জনগণকেও এ ব্যাপারে যথাযথ মাত্রায় সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। কারণ এর কোনো বিকল্প নেই।
আসলে বাস্তবতা হচ্ছে এমনই যে, এই করোনা অতিমারির বিস্তার ঠেকাতে আর নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকার গৃহীত সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা মেনে সরকারি কাজে সহযোগিতা করা ছাড়া উপায় নেই। কোনো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলেও অবশ্যই সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধিসমূহ মেনে চলতেই হবে।
গত কয়েকটি লকডাউনে দেখা গেছে, লকডাউন বাস্তবায়নে জনগণের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না।। মনে হয়েছে, জনতার মধ্যে এ বিষয়ে যথেষ্ট অনীহা রয়েছে। দেখা গেছে, কঠোর লকডাউন ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকে লাখো মানুষ পঙ্গপালের মতো রাজধানী ছেড়েছে। আবার লকডাউনে শ্রমজীবী মানুষ নানা রকম ভোগান্তির শিকারও হয়েছে। রিকশাচালক, অটোরিকশা, সিএনজি ও ভ্যান, হোটেল ও নির্মাণ শ্রমিকেরা লকডাউনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। তাঁদের আয়-রোজগার যাতে চলমান থাকে, সেটাও সরকারকে দেখতে হবে। নইলে তঁরা বেকার হয়ে পড়বে এবং এতে করে সমাজের স্থিতিশীলতায় বিঘœ ঘটতে পারে।
আশার কথা এই যে, কঠোর লকডাউনের মধ্যেই গত শনিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের যেখানে-যেখানে টিকা পাওয়া যাচ্ছে, সরকার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। যত টিকা লাগে, কিনবে সরকার। এজন্য বাজেটে আলাদা টাকাই রাখা আছে। এর জন্য কোনো চিন্তা করতে হবে না। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃপ্ত অবস্থান নিঃসন্দেহে দেশের মানুষকে আশান্বিত করেছে। সর্বান্তকরণে জনসাধারণেরও কামনা এই যে, বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের মাধ্যমে এই অতিমারির সংকট মোকাবিলায় সরকার সফল হোক। তবে একই বক্তৃতায় সরকার প্রধান স্বাস্থ্যবিধি পালনে মানুষের উদাসীনতায় হতাশাও প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ঈদুল ফিতরের সময় বারবার অনুরোধ করা হয়েছিল, কেউ যাতে নিজের জায়গা ছেড়ে না যান। কিন্তু অনেকেই সে কথা না শুনে ছুটে চলে গেছেন। যার ফল হচ্ছে সীমান্ত এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। তখন সবাই কথা শুনলে করোনা এভাবে ছড়িয়ে পড়ত না। এটাই বাস্তবতা। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণের জন্য, জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি নিয়েছে।
যত দ্রুত সম্ভব সরকারের এই কর্মসূচি ফলপ্রসূ হবে, জনগণের এটাই প্রত্যাশা।