সংকট কাটাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোসহ ৬ নির্দেশনা

সুপ্রভাত ডেস্ক »

কোভিড মহামারী ও ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে চলমান সংকট আগামী বছর আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছে সরকার; পরিস্থিতি সামলে নিতে কারণ উদঘাটন করে খাদ্য উৎপাদন, মজুদ ও রেমিটেন্স বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগসহ ছয় বিষয়ে জোরালো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও যাতে না পড়ে সেজন্য আগাম সতর্কতা হিসেবে এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি বেশি আয়ের জন্য বিদেশে দক্ষজনশক্তি পাঠানো এবং খাদ্যপণ্য আমদানির কিছু ক্ষেত্রে শুল্ক ও কর সহজ করার বিষয়ও নির্দেশনায় রয়েছে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “বৈশ্বিক যে অবস্থা আসছে, তাতে সারা বিশ্বে যে ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে, তাতে আমাদের কতগুলো ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। সম্প্রতি বৈশ্বিক ফিন্যান্সিয়াল এনালাইসিসগুলো যেটা বলছে যে, তিন কারণে ২০২৩ খুবই একটা ক্রাইসিসের বছর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

একটি হল ফেডারেল রিজার্ভ যেহেতু ‘রেইট অব ইন্টারেস্ট’ বৃদ্ধি করে দিয়েছে সেটা একটা। দ্বিতীয়ত, কোভিডের রিকোভারিটা হওয়ার আগেই ইউক্রেন যুদ্ধটা শুরু হয়ে যাওয়ার ফলে যে প্রোগ্রেসটা হচ্ছিল সেটা নেগেটিভের দিকে চলে যাচ্ছে। তিন নম্বর আরেকটি কারণ তারা বলছে, চায়না প্রোডাকশন রিমার্কেবলি (উল্লেখযোগ্যভাবে) কম করছে, যেটা আসলে ওয়ার্ল্ড মার্কেটকে ইনফ্লুয়েন্স করছে।”

আগামী বছর এসব কারণেই সংকটময় হওয়ার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সবাইকে এই অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে। এটাই আজকে রিপোর্ট উপস্থাপনের পরে মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়।’

খাদ্য উৎপাদন
সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণে প্রথমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা তুলে ধরা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে।

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ওনারা যে অবজারভেসন দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা.. প্রথমত আমাদের সর্বাবস্থায় ফুড প্রোডাকশনটাকে বাড়াতে হবে। আমরা যে যতই ফুড ইমপোর্টের কথা বলি, যাই করি ক্রাইসিসটা থাকবেই। যদিও ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে এখন ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে যে ফুডের বিষয়ে কোনো ইমপোজিশন থাকবে না। তবে স্টিল এটি ম্যাটার করবে।

আর ফরেইন কারেন্সির যেহেতু একটি সমস্যা হচ্ছে, কারণ যেহেতু ফেডারেল রিজার্ভের ‘রেট অব ইন্টারেস্ট’ বৃদ্ধি হওয়ার কারণে যেসব দেশগুলো লোন নিয়ে কাজ করে বা যাদের ইমপোর্ট বেশি তাদের কিন্তু দুদিক থেকেই অসুবিধা হচ্ছে। একটা হলো, আমরা যখন টাকা দিচ্ছি তখন আমরা বেশি দিচ্ছি আবার যখন নিচ্ছি তখন কম পাচ্ছি। সেজন্য ডাবল নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হচ্ছে।’

এজন্য মোস্ট ইম্পরটেন্ট কাজ হলো সবাইকে ফুড প্রোডাকশন বৃদ্ধি করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এটার সম্ভাবনাও আছে,’ বলেন তিনি।

বিদেশে দক্ষশ্রমিক
সংকট মোকাবিলায় বিদেশে দক্ষশ্রমিক পাঠানোর গুরুত্ব তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষশ্রমিক বিদেশে পাঠানো গেলে উচ্চ বেতন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে। সেক্ষেত্রে যেসব দেশে আমরা পাঠাব, সেসব দেশের চাহিদা অনুসরণ করে তাদেরকে যেন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা হয়। তাদের সার্টিফিকেটগুলো যেন প্রোপার ইন্সটিটিউশন থেকে তারা পায়, না হলে তাদের স্কিলের বা ট্রেনিংয়ের কোনো দাম থাকে না,” বলেন তিনি।

রেমিটেন্স বাড়াতে পদক্ষেপ
রেমিটেন্স বাড়াতেও বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়ার কথা জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে একটি সার্কুলার দিয়েছে যে, এখন থেকে রেমিটেন্স পাঠাতে কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটা হ্যান্ডেল করবে, যারা পাঠাবে তাদের কীভাবে বেনিফিট দেওয়া যায়, এটা সম্ভবত এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্লিয়ার করেছে বা করবে।

এক্ষেত্রে রেমিটেন্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা এবং তাদের কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে ডেটাবেইজ থেকে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার কথা জানান তিনি।

সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ
বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে বৈঠকের আলোচনা তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এজন্য প্রয়োজনীয় শর্তগুলোকে সহজ করার বিষয় এসেছে। এজন্য ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে।

শুধু বিডাতেই (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যাতে বিনিয়োগকারীরা সব সেবা পান সেজন্য কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এক বিডাতেই কয়েকটি উইন্ডো খোলা হবে, যেমন- পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন যেখানে ইন্ডাস্ট্রিটা হবে লাইসেন্স নিতে, যাতে তাকে সেখানে যেতে না হয়। এনবিআরের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষেত্রেও যাতে তাকে এনবিআরে যেতে না হয়। খবর বিডিনিউজ।

সচিব বলেন, আরেকটি বড় বিষয় ছিল, রিপ্যাট্রিয়েশন অব ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড, এটাও আমরা অনেক কমফোর্ট করে দিয়েছি। এটা আমরা নিজেরাই, আমাদের প্রায় এক দেড় বছর লেগেছে। এখন এটা অনেক কমফোর্ট হয়েছে। এরকম আরও কিছু কমফোর্ট দেওয়া যায় কি না যাতে করে ইনভেস্টররা আমাদের এখানে কাজ করতে আগ্রহী হন।”

খাদ্য মজুদ
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, ফুড স্টোরেজটাকে সবসময় কমফোরটেবল রাখতে হবে। এখন এটা ‘ভেরি কমফোর্টেবল’ অবস্থায় আছে। প্রাইভেট সেক্টরকেও অনেক ফুড ইমপোর্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিকটন।

একাধিক বড় দেশ যারা সাপ্লিমেন্টারি ফুড যেমন- তেল বা মসলা এক্সপোর্ট করে তাদের সাথে সরাসরি আমাদের ইমপোর্টারদের যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে সরাসরি করা যায় কি না, উইদআউট গোয়িং টু থার্ড পার্টি। সরাসরি গেলে কমফোর্টেবল প্রাইজে পাওয়া যাবে এতে আমাদের মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।

শুল্ক ও কর
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা আমাদের খাদ্যমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যে, উৎসকর সংক্রান্ত কিছু বিষয় আছে এটা দিতে হয়।

এনবিআরকে বলা হয়েছে, আলাপ-আলোচনা করে ইমিডিয়েটলি যেন তারা একটি সন্তোষজনক প্রোভিশনের মধ্যে যায়, যাতে করে আমাদের ফুড ইমপোর্টারা কমফোর্টে আসতে পারে।