সংকটাপন্ন সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করতে হবে

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত। আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন।
সেন্ট মার্টিনে প্রবাল, শৈবাল, কাছিম, শামুক, ঝিনুক ও কড়ি, সামুদ্রিক মাছ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী, কাঁকড়াসহ ১ হাজার ৭৬ প্রজাতির জীববৈচিত্র্য রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। এ দ্বীপে বর্তমানে ২৫০-এর বেশি প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় জলপাই রঙের কাছিমের ডিম পাড়ার স্থান এই দ্বীপের বালিয়াড়ি।
সেন্ট মার্টিনের পানির নিচে প্রায় ৩৩০ প্রজাতির সি-উইড (সামুদ্রিক আগাছা) পাওয়া যায়। এটি ভীষণ রকমের বিরল ব্যাপার। এটা দিয়ে তৈরি খাবার যেমন মূল্যবান তেমন পুষ্টিকরও। অনেক দেশেই এসবের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এসব সি-উইড যদি সেন্ট মার্টিনে সংরক্ষণ করে অন্য জায়গায় চাষাবাদ করা হয়, তাহলে অর্থ উপার্জনের বিরাট একটা উপায় খুলে যেতে পারে।
বাংলাদেশে দুটি ইকোসিস্টেম (প্রতিবেশব্যবস্থা) ভীষণ রকমের গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুন্দরবন, অন্যটি সেন্ট মার্টিন। তবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের গমন ও পরিবেশ দূষণের কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। ‘সেন্ট মার্টিনকে মেরে ফেলা হচ্ছে’- এই শিরোনামে গতকাল একটি জাতীয় দৈনিক লিড স্টোরি করেছে।
পর্যটন মৌসুমে দিনে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যান। দ্বীপে যত্রতত্র ময়লা, আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল, চিপসের প্যাকেট ও হোটেল-রেস্তোরাঁর বর্জ্য ফেলা হয়। বড় উদ্বেগের দিক হলো, দ্বীপে কেয়াবন উজাড় করে হোটেল-রিসোর্ট নির্মিত হচ্ছে।
এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৯৮০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩৮ বছরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রবাল প্রজাতি ১৪১টি থেকে কমে ৪০টিতে নেমেছে। বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সাড়ে চার বর্গকিলোমিটার থেকে কমে নেমেছে তিন বর্গকিলোমিটারে। আন্তর্জাতিক ওশান সায়েন্স জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, ২০৪৫ সালের মধ্যে দ্বীপটি পুরোপুরি প্রবালশূন্য হতে পারে।
দ্বীপটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ বসবাস করে। তাদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে। এ ধরনের একটি দ্বীপে কোনোভাবেই দিনে ৯০০ জনের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া উচিত নয়, তাও সীমিত পরিসরে এবং নিয়ন্ত্রিতভাবে তাদের যাতায়াত করতে দেওয়া উচিত। এ অভিমত অধ্যাপক আইনুন নিশাতের।
মানুষের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি পরিবেশ, প্রকৃতি, বন ও জলাভূমি রক্ষা করাও আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। সরকারের উচিত কঠোরভাবে দ্বীপটি রক্ষায় ব্যবস্থা নেয়া। দরকার হলে শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটির প্রকৃতি ধ্বংস করে গড়ে ওঠা অবকাঠামো উচ্ছেদ করতে হবে এবং দ্বীপটিকে রক্ষা করতে হবে।