শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে করোনো কালে অর্থনীতিতে সাফল্য

মোতাহার হোসেন »

বৈশি^ক মহামারি করোনা দেশের সামগ্রিক কাঠামোতে আঘাত হেনেছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে মানুষের কর্মক্ষেত্রে, জীবিকা নির্বাহে ও দেশের অর্থনীতিকে নতুন করে চাপে ফেলেছে। বাংলাদেশসহ পুরো বিশে^র মানুষ হতাশা,অনিশ্চয়তা আর গভীর অন্ধকার দেখছিলেন তাদের সামনের দিনগুলো সম্পর্কে।
এ পর্যায়ে করোনার কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা ও মানুষের জীবনযাত্রা ভবিষ্যৎ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ,বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, দাতা প্রতিষ্ঠানসমূহ। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের আয় কমে যাওয়া, কর্মসংস্থান হ্রাস, শিশু ও নারীদের পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবেনা এমন কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু এসব আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের পূর্বাভাস,আশংকাকে ভুল প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, সময়োচিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ,দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং তাঁর সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায়। এসব কারণেই দেশের হতাশাগ্রস্ত মানুষ, অনিশ্চয়তা,অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে করোনা মোকাবিলা এবং মানুষের জীবিকা ও জীবনকে সচল রাখা এবং অর্থনীতিকে গতিশীল রাখছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ‘ সোয়া লক্ষ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ।’’ গত ১৫ সেপ্টেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) করোনার মধ্যেই সরকারের সোয়া লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজসহ নানা কর্মসূচির কারণে চলতি অর্থবছরে জিডিপি ৬.৮% অর্জিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এখানেই নিহিত রয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে অর্থনীতিতে সাফল্য অর্জনের মূল চাবিকাঠি।
প্রসঙ্গত আমাদের দেশে করোনার ধাক্কা সামলাতে শুরু থেকে মানুষের জীবন,জীবিকা রক্ষার পাশাপাশি প্রায় সোয়া লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পাশাপাশি দেশের অতিদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকার কথা বিবেচনায় নিয়ে নানারকম সামাজিক কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ ও উপকারভোগীর সংখ্যা, সহায়তার পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। এসব কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্যই হচ্ছে প্রাণঘাতি করোনার মধ্যে মানুষের জীবন রক্ষা করা, মানুষের জীবিকার চাকা সচল রাখা এবং দেশে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতি এগিয়ে নেয়া।
স্থানীয় এবং বৈশি^ক অর্থনৈতিক সূচকেও বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্ত, সবল এবং নিয়ত গতিশীল, ঊর্ধ্বমুখী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। তথা ৪০.৫৩ বিলিয়ন ডলার। এই আয় লক্ষ্যমাত্রা অপেক্ষা ৪% বেশি আর ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের চেয়ে ১০% বেশি।
এ সময় শুধু রপ্তানিমুখি তৈরি পোশাক খাত থেকে আয় হয় ৩ হ্জাার ৪১০ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১১.৯৯% বেশি। মূলত রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ আর রেমিটেন্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সর উপর ২% হারে এবং পণ্য রপ্তানি আয়েও প্রণোদনা প্রদান।
সম্প্রতি বাংলাদেশ, উন্নয়ন সহযোগী এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কর্তৃক প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের সেপ্টেম্বর আপডেটে ইতিবাচক তথ্য ওঠে এসেছে। তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়,‘‘ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস মহামারির ধাক্কা সামলে অর্থনৈতিক কর্মকা- ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়তে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি।’’ তবে এই পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে মহামারিকেই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে এডিবি।
অর্থাৎ, বাংলাদেশে কিংবা বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের গন্তব্য দেশগুলোতে মহামারির সংকট দীর্ঘায়িত হলে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। তারা বলছে, উৎপাদনের গতি বাড়ায় এবং বাংলাদেশি পণ্যের ক্রেতা বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২১ সালে মূল্যস্ফীতিকে ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং চলতি হিসাবের (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট) ঘাটতিকে জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে পারবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
এপ্রিল মাসের পর থেকে প্রবাসীদের পাঠানো টাকার পরিমাণ আশাতীত হারে বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত রেমিটেন্সেও ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। গত অর্থবছরে দেশে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। তবে মহামারির সংকটে রপ্তানি আয় যতটা ধাক্কা খাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, শেষ পর্যন্ত পিরিস্থিতি ততটা খারাপ হয়নি।
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, ‘‘রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের উন্নতি দেখে আমরা উৎসাহ পাচ্ছি।’’ আশা করছি, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই ধারা টেকসই হবে। আর তা করা গেলেই প্রাক্কলিত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে।
এডিবি প্রদত্ত বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই সংকটে সম্পদের যথাযথ বণ্টন, ব্যবস্থাপনা, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ, নতুন নতুন ভাবে কর্মসংস্থানের বিবিধ ক্ষেত্রে বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি তথা ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর কর্মসংস্থান,আউট সোর্সিং, ক্ষুদ্র, মাঝারি, কুটির শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি,হাঁস মুরগি গবাদি পশু পালন ,মৎস্য খামার গড়ে তুলে বেকার,তরুণ-যুবকদের কর্মসংস্থান করা গেলে বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান, আরো গতিশীল হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন যে,করোনা কালে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন না করে এই সময়ের উপযোগী প্রকল্প গ্রহণ করা পাশাপাশি যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেয়া। প্রত্যাশা থাকবে করোনা কালে মানুষের জীবন,জীবিকা স্বাভাবিক রাখা এবং কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান করতে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন।
তাহলেই সম্ভব ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মতো বৈশি^ক মহামারি করোনা যুদ্ধেও জয়ী হয়ে দেশকে, দেশের আপামর মানুষকে স্বস্তির জায়গায় রাখা সম্ভব হবে।

লেখক : সাংবাদিক, সাধারণ সম্পাদক-বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম
সড়ঃধযবৎনফ১২৩@মসধরষ.পড়স