শিশু ও শীতার্তজনের পাশে দাঁড়ান

সারাদেশে এখন বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এ শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন ধরে এ ধারায় চলতে পারে। এরপর এর গতি বাড়বে। এতে বিশেষ করে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে ব্যাপকহারে। এ ব্যাপারে গতকাল ‘দৈনিক সুপ্রভাত’ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৪ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। শুধু চমেকেই নয়, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতেও শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
চমেক হাসপাতালের একজন সেবিকা এ ব্যাপারে জানাচ্ছেন, ঠান্ডা মৌসুম আসার আগে রোগীর এমন ভিড় ছিল না। প্রতিটি বেড়ে এখন রোগীর সংখ্যা তিনজন। এমন কি স্থান সংকুলান না-হওয়ায় অনেক শিশুরোগীকে মেঝেতে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ হলো চট্টগ্রাম এবং আশপাশ এলাকার চিত্র। অন্যদিকে এ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পাল্লায় পড়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের টাঙ্গাইল ফরিদপুর শ্রীমঙ্গল যশোর কুষ্টিয়া বরিশাল ভোলা রংপুর রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার দরিদ্র ও নিম্নবিত্তশ্রেণির মানুষের জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে।
এসব জেলায় ঠান্ডার সঙ্গে রয়েছে কনকনে হাওয়া। শীত নিবারণবস্ত্রের অভাবে এসব এলাকার কৃষক ও শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষেরা শীতে জবুথবু অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছে। এর মধ্যে জীবন ও জীবিকার সংকটে পতিত মানুষের জন্যে শীতবস্ত্র বিতরণ, আপদকালীন সহায়তা প্রদানের সরকারি উদ্যোগও অপ্রতুল বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে আবার আবহাওয়াবিদরা জানাচ্ছেন, চলতি মাসেই আরেকটি শৈত্যপ্রবাহের আশংকা রয়েছে এবং তা চলমান প্রবাহ থেকে তীব্রতর হতে পারে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশ এখনো করোনা অতিমারির ভয়ংকর আবহের মধ্যেই রয়েছে। এদিকে দিন দিন এর প্রকোপ বাড়ছে বলেই জানাচ্ছে দায়িত্বশীল মাধ্যমগুলো। যদিও তর্কাতীতভাবে এটি প্রমাণিত নয় যে, শীতের প্রভাবে করোনারও প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। তথাপি জনমনে এমন আশংকা বিদ্যমান যে, শৈত্যের কারণে করোনার সংক্রমণও বৃদ্ধি পেতে পারে। একদিকে শীতের মাঝারি ও তীব্র প্রবাহের আশংকার ভেতরে থাকা দুর্গত মানুষ, অন্যদিকে করোনা সংক্রমণ, এমন শংকা ও ভীতির ভেতর বসবাসরত মানুষের জন্যে আশার একমাত্র বারতা হতে পারে, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্রের পাশাপাশি আপদকালীন সাহায্য-সহায়তার হাত বাড়ানো। তা একেবারেই হচ্ছে না, তা নয়। তবে শীতার্ত মানুষ ও তাদের চাহিদার তুলনার তা যৎসামান্য হওয়াতেই যত বিপত্তি। অথচ এমন নয় যে, প্রশাসনযন্ত্রের কমিউনিকেটিভ কোনো সমম্যা বিদ্যমান রয়েছে। বরং ডিজিটাল অগ্রসরতার সুবাদে সেক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণের কিছু সুনাম তো রয়েছেই। মূল সমস্যা এখানে নয়। সেটি যেখানে প্রত্যক্ষ হয়ে উঠছে, তা হলো প্রয়োজনে শীতবস্ত্র ও আপদকালীন সহায়তা প্রদান যোগাড়যন্ত্রে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতা।
এক্ষেত্রে দ্রুত ও কার্যকর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও স্টেকহোল্ডারদের তৎপরতা বিপন্ন মানুষের মনে নিরাপত্তাবোধের সঞ্চার করবে। একইভাবে তা করোনা অতিমারির বিস্তারজনিত আশংকাকেও প্রশমিত করবার বাতাবরণ হয়ে উঠবে।