করোনায় ডা. হাসান মুরাদের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি, সাতকানিয়া :
চট্টগ্রামের মানবিক ডাক্তার সমিরুল ইসলামের পর এবার না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাতকানিয়ার ‘গরীবের বন্ধু’ খ্যাত ডা. হাসান মুরাদ। সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক চিকিৎসক নিয়োজিত থাকাকালীন অসহায় ও গরীবদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে গরীবের বন্ধু খ্যাতি পাওয়া ৪৬ বছর বয়সী ডা. হাসান মুরাদ করোনার জটিলতায় সৃষ্ট কোভিড এনক্যাফালাইটিসে ভুগে অবশেষে চট্টগ্রাম নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ২দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গতকাল সোমবার ভোর ৫টার সময় তিনি মারা যান (ইন্নালিল্লাহি…….রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তাফিদা হাসান (৬) ও মো. তাহফিস হাসান (৪) নামে ২ শিশু সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান। তিনি সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড মাওলা পাড়ার নুরু মাস্টার বাড়ির মৃত আবদুল মোনাফের ছেলে ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ এর এমবিবিএস ৩৫তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে সাতকানিয়ার বিস্তৃত জনপদে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে শোকের মাতম।
এ ব্যাপারে সাতকানিয়ার বাসিন্দা ও স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ডা. হাসান মুরাদ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে কোভিড শনাক্তে স্থাপিত আরটি-পিসিআর ল্যাবে শুরু থেকেই কাজ করে আসছিলেন। সেখানেই তিনি কোভিড আক্রান্ত হন। প্রথমে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও কোভিড জীবাণু মস্তিস্কের কোষে বাসা বাঁধে। ফলে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ২ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর তিনি মারা যান। তিনিই চট্টগ্রামে কোভিড আক্রান্ত পরবর্তী এনক্যাফালাইটিস জটিলতায় মৃত্যুবরণকারী প্রথম রোগী।
ডা. হাসান মুরাদের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে শোকের মাতম। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জিল্লুর রহমান ফেসবুকে লিখেছেন-হাসান মুরাদ আমার সহকর্মী হিসেবে প্যাথলজির লেকচারার ছিলেন। পরে মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্টে আসেন। তাকে সবসময় হাসি মুখেই দেখেছি। এমনকি সংকটময় পরিস্থিতিতেও তার হাসি ছিল অম্লান। আজ হাসান মুরাদ চিরনিদ্রায় শায়িত। হাসান মুরাদদের মত মানুষ এ বস্তুবাদী সমাজে খুবই প্রয়োজন।
সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য বিভাগের বর্তমান সহকারী পরিচালক ডা. মেজবাহ উদ্দীন বলেন, ভালো ব্যবহার ও ভদ্র স্বভাবের ডা. হাসান মুরাদ সাতকানিয়ার প্রিয়মুখ ও গরীবের বন্ধু ছিলেন। কোন জাত ভেদাভেদ না রেখে চিকিৎসা দিতেন তিনি। এছাড়া সাতকানিয়ার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে তার অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য।