‘শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে’

কাপ্তাই হ্রদে সম্প্রীতির নৌকা বাইচ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »

হেমন্তের দুপুরে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। পার্বত্য চুক্তির দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি সেনা জোনের উদ্যোগে গতকাল শনিবার দুপুরে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চারটি ইভেন্টে ১২টি দল এই নৌকাবাইচে অংশগ্রহণ করে।

নৌকা বাইচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান রাঙামটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি রিজিয়নের ভারপ্রাপ্ত রিজিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল এরশাদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মারুফ আহম্মেদসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তারা।

পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথি দীপংকর তালুকদার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন একটি অশান্ত পরিবেশ ছিল। শান্তি চুক্তির ফলে পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। শান্তি চুক্তির পর থেকে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তির সুবাতাস ফিরে আসে। পাহাড়ে শান্তির এই ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানানে হয়।

ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে কাপ্তাই হ্রদের তীরে ভিড় করে হাজারো পাহাড়ি-বাঙালি নারী পুরুষ। অনেকেই বোট-নৌকা নিয়ে হাজির হন নৌকা বাইচ দেখতে। শুধু শহর থেকেই নয়; দূর গ্রাম থেকে পাহাড়ি নারী-পুরুষ নৌকা বাইচ দেখতে ভিড় করে শহীদ মিনারের নিচে হ্রদের জলে। তাদের হর্ষোধ্বনি ও উল্লাসে এই সময় প্রতিযোগীরা বৈঠার তালে তালে এগিয়ে যায়। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেলায় মুগ্ধতা প্রকাশ পায় তাদের চোখে-মুখে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শান্ত ত্রিপুরা বলেন, শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তিতে এই নৌকা খেলার আয়োজন করাতে আমরা খুব খুশি। আমরা দলগতভাবে অংশগ্রহণ করেছি এবং দ্বিতীয় হয়েছি। এই ধরনের প্রতিযোগিতা প্রতিবছর হওয়া উচিত।

কিল্লামুড়া থেকে আসা জয়িতা ত্রিপুরা বলেন, নৌকা বাইচ খেলা দেখতে এসেছি। পাড়া থেকে কয়েকটা বোট এসেছে। আমরা খুবই উপভোগ করি নৌকা বাইচ। আমাদের পাড়া থেকে নৌকা বাইচে বিভিন্ন ইভেন্টে কয়েকটি দল অংশ নিয়েছে। সকলেই খুবই মজা করছি।

আরেক প্রতিযোগী সাধনা চাকমা বলেন, আমরা এসেছি কেইল্যাপাহাড় রাজমুনি পাড়া থেকে। আজকের বাইচটা খুবই সুন্দর হয়েছে। এই বাইচে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। খেলায় হারজিত থাকেই, কিন্তু অংশগ্রহণটাই আমাদের কাছে আনন্দের।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় পুরুষদের বড় নৌকা ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয় রতন ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্স আপ হন প্রশান্ত ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হন চিরমনি ত্রিপুরা ও তার দল। প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ক্যাটাগরি মহিলাদের বড় নৌকায় চ্যাম্পিয়ন হন পূণ্যরাণী ত্রিপুরা ও তার দল, প্রথম রানার্স আপ হন আলো ত্রিপুরা ও তার দল এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হন সুবর্ণা ত্রিপুরা ও তার দল।

পুরস্কার হিসেবে দুই ক্যাটাগরির চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০,০০০ টাকা, ১ম রানার্স আপ দলকে ৩৫,০০০ টাকা, ২য় রানার্স আপ দলকে ২৫,০০০ টাকা এবং সান্ত¦না পুরস্কার হিসেবে ১০,০০০ টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা।

নৌকা বাইচে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকা নিয়ে হাজির হয় প্রতিযোগিরা। নৌকা বাইচ দেখতে এসময় হ্রদের তীরে ভিড় করে হাজারো নারী-পুরুষ।