শহর দাবড়াচ্ছে রাইড শেয়ারিং পাঠাও,সহজ

শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেল। অক্স্রিজেন এলোকা থেকে তোলা ছবি- সুপ্রভাত

করোনাকালে বন্ধ গণপরিবহন
মোহাম্মদ রফিক :
মঙ্গলবার সকাল ১০টা। অক্সিজেন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ফরিদুল আলম। যাবেন আগ্রাবাদে। খুব দ্রুত যেতে হবে তাকে। তিনি রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাওয়ে কল দিলে সাড়া মেলেনি। কয়েকজন বাইক চালক বললেন, অ্যাপসে যাবেন না। ভাড়ায় গেলে যাবেন। অবশেষে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে রওনা হন ফরিদুল।
যাওয়ার আগে ফরিদুল বলেন, ‘একসময় সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ ছিল সাধারণ মানুষ। যখন রাইড শেয়ারিংয়ের মতো পরিবহন সেবা আসল তখন মানুষ সাদরে গ্রহণ করেছিল। এখন পাঠাও-সহজের চালকরা যেভাবে ডেকে যাত্রী নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে অটোরিকশা চালকদের আর কোনো পার্থক্য নেই।
‘আসুন একজন সিটি গেট ২০০ টাকা,’ ‘শাহ আমানত সেতু একজন ২৫০ টাকা, মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে অক্সিজেন মোড়ে দাঁড়িয়ে হকারের মতো যাত্রীদের উদ্দেশে এভাবে হাঁকডাক দিচ্ছিলেন পাঠাও এর বাইক চালক আব্দুল হালিম।
এ মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা পাঠাও এর বাইক চালক মফিজ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে বলেন, হাটহাজারী, পটিয়া, ফটিকছড়ি বা সীতাকু- যেখানেই বলেন চাহিদা মতো টাকা দিলে যাত্রী নিয়ে যাই।’
সরেজমিনে দেখা গেছে , অক্সিজেন, নতুনপাড়া, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট এলাকায় ডেকে ডেকে যাত্রী নিচ্ছেন মোটরসাইকেল চালকরা। অনেকে অ্যাপস বন্ধ করেই যাতায়াত করছেন।
করোনার কারণে গণপরিবহন বন্ধ আছে প্রায় দুইমাস। এ সুযোগে শহরে বেড়েছে পাঠাও কিংবা সহজ রাইড শেয়ারিং এর দৌরাত্ম। নিবন্ধন নেই এমন বাইক চালকেরা শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা এখন সিএনজি অটোরিকশা কিংবা রিকশাওয়ালার দর কষাকষি যাত্রী আনা-নেওয়া করছেন। এতে যাত্রীদের করোনাকালে গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা।
জানা গেছে, অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকার পরে চট্টগ্রাম নগর এলাকার রাস্তায় বেড়েছে পাঠাও, সহজ ও উবারে রাইডারের সংখ্যা বেড়েছে। তবে এদের বিরুদ্ধে অভিযোগও বেশি। যাত্রী হয়রানি, বেপরোয় গতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
দুইদিন আগে নগরের প্রবেশপথে কড়াকড়ি আরোপ করে নগর পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, গণপরিবহন বন্ধ থাকার সুযোগে নগরের মোড়ে মোড়ে রাইড শেয়ারিং পাঠাও, সহজ’র বাইক চালকদের দৌরাত্ম। এসময়ে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ থাকলেও মানছেন না অনেকেই। তাদের গাড়ি আটক করে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের।
এ বিষয়ে পাঠাওয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন এম ইলিয়াসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে পিআর সেকশনের একটি ফোন নম্বর দেন। কিন্তু সেখানে একাধিকবার কল করলেও কেউ রিসিভ করেননি।
সিএমপির উপকমিশনার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘এখন কোন রাইড শেয়ারিং শহরের চলাচলে নিষেধ আছে। পুলিশ সাজেন্ট তাদের নিয়মিত মামলা দিচ্ছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে মুরাদপুর মোড়ে অটোরিকশা চালক মান্নান সৈয়দ বলেন, ‘এ কাজে আর পোষায় না। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে শহরে একদম গাড়ি চালানো যাচ্ছে না। সকাল থেকে অলস সময় কাটাচ্ছি। উবার, পাঠাওয়ের কারণে আমাদের ভাড়া কমে গেছে। প্রতিদিন ৭০০ টাকা মালিকের কাছে জমা দিতে হয়।’
তবে হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি সিএনজি ব্যবহার প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। তারা কম দূরত্বের মধ্যে অনেক বেশি ভাড়া চেয়ে বসেন। অনেক সময় জায়গা মতো যেতেও চায় না। তাই উবার বা পাঠাও ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট ভাড়া ওঠে। সিএনজিওয়ালাদের এটা আগে লাইনে আনা উচিত।”
প্রসঙ্গত, ঢাকার পরে চট্টগ্রাম শহরে পরিবহন সেক্টরে নানা অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার সুযোগে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ফোনে অ্যাপভিত্তিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল শেয়ার নেটওয়ার্ক উবার অথবা পাঠাও এর মতো কোম্পানি।