শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বাড়ানো হয়নি লোকবল

চমেকে হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বৃহত্তর চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবায় একমাত্র ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। প্রতিদিনই গড়ে তিন হাজারের অধিক রোগী ভর্তি থাকেন। গত বছর ২০২২ সালে হাসপাতালে মোট চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ১২০ জন রোগী। রোগী এবং শয্যাসংখ্যা বাড়লেও সে অনুপাতে বাড়ানো হয়নি লোকবল। এতে চাপ পড়ছে চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীদের উপর। ফলে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। এদিকে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসে সেবা নিয়েছেন ৮০ হাজার ২৬৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৭১ হাজার ৯৬৭, মার্চে ৮৬ হাজার ২৫৮, এপ্রিলে ৬৮ হাজার ৪৪৩, মে মাসে ৭৮ হাজার ৯৫৫, জুনে ৭৮ হাজার ৬৩৫, জুলাইয়ে ৮৩ হাজার ৬৩৫ জন, আগস্টে ৮৫ হাজার ৮০২, সেপ্টেম্বরে ৮৪ হাজার ৭৯১, অক্টোবরে ৯৪ হাজার ৯৫৩, নভেম্বরে ৯৫ হাজার ৩৬১ এবং ডিসেম্বরে ৮৯ হাজার ৫৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে ১৯৬০ সালে ১২০ শয্যা দিয়ে যাত্রা শুরু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের। হাসপাতালটিকে ১৯৬৯ সালে ৫০০ শয্যায়, ১৯৯৬ সালে ৭৫০ শয্যায়, ২০০১ সালে ১ হাজার ১০ শয্যায়, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৩১৩ শয্যায় এবং ২০২২ সালের জুনে ২ হাজার ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২ হাজার ২০০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ৩৪৩ জন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। কয়েক দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে মোট শয্যা ৫০০ থেকে বর্তমান সংখ্যায় উন্নীত করলেও চিকিৎসকের সংখ্যা সে হারে বাড়েনি।

একই সাথে ৫ বছর আগে হাসপাতালে ৪৩৭ জন নার্সিং স্টাফ ছিলেন। গত কয়েক বছরে নতুন নিয়োগের পর এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৮ জনে। গড়ে তিন হাজার রোগীর জন্য এই সংখ্যাটা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৫৬৫টি পদের মধ্যে ১৭৩টি শূন্য রয়েছে এখনো।

চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান ডা. অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তি কখনো কমবে না। বরং বাড়তে থাকবে। আমাদের বিভাগে প্রতিদিন বাড়তি রোগী ভর্তি হয়। আমরাও চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকি। কিন্তু এই কম লোকবল নিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। কাজেই দ্রুত হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধি করা দরকার। তাছাড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বাড়াতে জোর দিতে হবে। কেননা জেলা হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা পেলে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে চাপ কমে যাবে।

রেডিওলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, পুরো হাসপাতালেই লোকবলের সংকট। শুধু তাই নয় ঘাটতি রয়েছে দক্ষ লোকের । এ কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রোগীর বাড়তি চাপ নিতে হচ্ছে আমাদের। আমাদের ক্লাস নেওয়া, প্রশাসনিক কাজসহ অন্যান্য কাজ একাই করতে হচ্ছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, লোকবলের সংকট রয়েছে। আমরা এই সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। মন্ত্রণালয়ে ৬ মাস আগেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা সেটা দেখছেন। লোকবল তো আমরা নিয়োগ করতে পারি না। বিষয়টি সম্পূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দেখেন। যেহেতু শয্যা সংখ্যা বেড়েছে অবশ্যই লোকবলও বাড়ানো হবে।