শতাব্দীর সেরা জয়

মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টেস্টে রেকর্ড জয় পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। একবিংশ শতাব্দীতে রানের দিক দিয়ে এর চেয়ে বড় জয় আর নেই। আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানে হারিয়ে বাংলাদেশ শুধু নিজেদের ইতিহাসই সমৃদ্ধ করেনি, দেড়শ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে রানের দিক থেকে তৃতীয় এবং আধুনিক টেস্ট যুগে সর্বোচ্চ রানের জয়ে রেকর্ড গড়ার ইতিহাস গড়েছেন লিটনরা।
টেস্টে রানের দিক থেকে এর চেয়ে বড় জয়ই আছে আর কেবল দুটি। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ সালে সেই অস্ট্রেলিয়াই ৫৬২ রানের হার ফিরিয়ে দিয়েছিল ইংলিশদের। তবে ওই দুটো জয়ই ৯৫ ও ৮৯ বছর আগের ঘটনা। দুটোই গত শতাব্দীর ঘটনা। এই শতাব্দীতে আজকের আগপর্যন্ত রানের ব্যবধানে সর্বোচ্চ জয়ের গৌরব ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জোহানেসবার্গে ৪৯২ রানের জয়, যেটিকে কাল পেছনে ঠেলে দিয়েছে লিটন দাসের বাংলাদেশ। সেই হিসাবে ক্রিকেটের আধুনিক কাল ও এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় জয় বাংলাদেশেরই।
এই টেস্টের যা অবস্থা ছিল আগেরদিন ইনিংস ছেড়ে না দিলে বিশ্ব রেকর্ডও গড়তে পারত বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষকে সবচেয়ে বড় লক্ষ্য দিয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতার হাতছানি ছিল। তবে যা হয়েছে তাতেও রেকর্ড বইয়ে উঠে গেল বাংলাদেশের নাম। আফগানিস্তানকে বিধ্বস্ত করে ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে রানের দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৩৪ সালের পর এটাই সবচেয়ে বড়। ৮৯ বছরের মধ্যে টেস্টে বৃহত্তম জয়ের রেকর্ড এখন বাংলাদেশের।
সাকিব-তামিমের শূন্যতা বুঝতে না দেওয়া পারফরম্যান্স দারুণ প্রশংসনীয়। পাইপলাইনে আমাদের ব্যাটিং অর্ডারে আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। নতুন যারা আসছে, ওরা সামর্থ্যবান। সামর্থ্যের ঝিলিক দেখাচ্ছেন তাঁরা। তাই সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশও জয়ের ছন্দে।
তাসকিন-এবাদত-শরিফুল ত্রয়ী সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অর্জনের অন্য এক চূড়া ছুঁয়েছে। মিরপুর টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে পেসাররা নিয়েছেন ১৪ উইকেট। যা দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এক টেস্টে তাঁদের সর্বোচ্চ শিকার ধরার ঘটনা। আগের সেরা ছিল ১৩ উইকেট, মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় লেখা হয়েছিল যে পারফরম্যান্সে। এবার নতুন ইতিহাস লেখার পথে পেসাররা ছাড়িয়ে গেলেন নিজেদের।
সিনিয়র ক্রিকেটারদের ছাড়াই আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে জেতার আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এই আত্মবিশ্বাস তারা পেয়েছেন গত বছরের মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট থেকে। সাকিব-তামিমকে ছাড়া খেলতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে তাদেরই মাটিতে হারিয়ে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। লম্বা সময়ের মধ্যে এশিয়ার কোনো দলের বিপক্ষে সেটাই ছিল নিউজিল্যান্ডের প্রথম হার।
অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে। আত্মবিশ্বাস অটুট থাকুক এই প্রত্যাশা।