লোডশেডিং : ফেরা হচ্ছে তেলভিত্তিক উৎপাদনে

সুপ্রভাত ডেস্ক »

কয়লা সংকটে সোমবার বন্ধ হয়ে গেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। গত ২৫ মে কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং বাড়তে শুরু করে। এখন এ সমস্যা আরও বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পায়রা-সংলগ্ন এলাকায় থাকা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছরের জুলাই মাসে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বন্ধ করার ফলে তখন প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়। বর্তমান এই বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও সহসা উন্নতি হওয়ার কোনো আভাস নেই। ডলার সংকট না কাটায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না।

জানা গেছে, সংকট নিরসনে তেলভিত্তিক প্ল্যান্টগুলোতে ফের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে পিডিবি। বিশেষ করে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় (বরিশাল-খুলনা) থাকা তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদনে জোর দেওয়া হচ্ছে। রামপাল ও পায়রাসহ খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে মোট বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ২০টি। এর মধ্যে খুলনা অঞ্চলে ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক কেন্দ্র আছে ছয়টি। এগুলো হলো- খুলনা ১১৫ পিপি মেগাওয়াট, ফাঁদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পিপি, গোপালগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়া ৪০ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট ও মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র।ডিজেলভিত্তিক আছে তিনটি কেন্দ্র। সেগুলো হলো- খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি, নোয়াপাড়া ১০০ মেগাওয়াট ও খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট সিসিপিপি।

গ্যাস ভিত্তিক আছে দুটি কেন্দ্র- খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট (উৎপাদনে আসেনি) ও ভেড়ামারা ৪১০ মেগাওয়াট। এছাড়া মোংলায় অরিয়ন ১০০ মেগাওয়াটের সোলার প্লান্ট আছে একটি।অপরদিকে বরিশাল অঞ্চলে ফার্নেস তেলভিত্তিক প্ল্যান্ট আছে দুটি। সেগুলো হলো সামিটের মালিকানাধীন বরিশাল ১১০ মেগাওয়াট পিপি ও ১৫০ মেগাওয়াট ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার লিমিটেড।

বরিশালে গ্যাসভিত্তিক তিনটি কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে ভোলা ৩৩ মেগাওয়াট পিপি, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি ও ২২০ মেগাওয়াট ভোলা নতুন বিদ্যুৎ লিমিটেড। একটিমাত্র কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র হলো বানসাল ৩০৭ মেগাওয়াট। খবর ঢাকাপোস্ট। কেন্দ্রগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতা (খুলনার ২২৫ ও ৩৩০ মেগাওয়াট বাদে) ২ হাজার ৩৮০ মেগাওয়াট।যদিও রামপাল ও পায়রা একত্রে ২ হাজার ৫৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এ দুটো বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো খুলনা, বরিশালসহ আশেপাশের অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতো।ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে তেলের অভাবে খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট, মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট এবং সামিটের ১১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ ছিল।

তবে পিজিসিবির সর্বশেষ রিপোর্টের (৫ জুন) তথ্যানুসারে, খুলনা ২২৫ মেগাওয়াট প্লান্ট থেকে ১২০ মেগাওয়াট, রূপসা ১০৫ মেগাওয়াট থেকে ১৭ মেগাওয়াট ও সামিটের ১১০ মেগাওয়াট থেকে ১৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে তেলের চাহিদাপত্র পাঠায় পিডিবি। বিপিসি সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন মাসে পিডিবির তেলের চাহিদা ছিল ৫৫ হাজার মেট্রিক টন। যা এরইমধ্যে তাদেরকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে লোডশেডিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপিসির কাছে পিডিবি অতিরিক্ত তেল চেয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) এস এম ওয়াজেদ বলেন, পায়রার ঘাটতি মেটানোর জন্য আমরা কয়েকটি তেলভিত্তিক প্ল্যান্ট চালু করেছি। এর মধ্যে সামিটসহ বেশ কয়েকটি প্ল্যান্ট রয়েছে। পায়রা পুনরায় উৎপাদনে আসার আগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমরা।