রাঙামাটিতে সীমান্ত সড়ক পরিদর্শনে সেনাপ্রধান

দেখলেন প্রকল্প কাজের অগ্রগতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাঙামাটি »

পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় তৈরি হচ্ছে সীমান্ত সড়ক। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অনুমোদিত কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

গতকাল সোমবার দুপুরে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাংলাদেশ ভারত সীমান্তবর্তী জুরাছড়ি উপজেলার দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের সাইচাল আর্মি ক্যাম্প এলাকায় প্রকল্পটির কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স এর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৬, ২০ এবং এডহক ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

পরিদর্শনকালে সেনাপ্রধান বলেন, দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো কাজ আমরা করছি, যার মধ্যে অন্যতম সীমান্ত সড়ক নির্মাণ। এ সড়ক নির্মাণের কাজ কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে সেটি সরেজমিনে দেখার জন্য এসেছি। কাজের অগ্রগতি দেখে আমি যথেষ্ট খুশি। কাজ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে কাজ শেষ হবে।

তিনি আরও বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় এই অঞ্চলে কাজ করা কঠিন। এই কঠিন কাজটি সেনাবাবিহীন সদস্যরা কতটা কষ্ট করে করছে আপনারাই দেখেছেন। একই সাথে এই কাছের সাথে জড়িত সদস্যদের মনোবল বাড়াতেও আমরা এই সফর। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকা এই অঞ্চলে কাজ করা সেনাসদস্যদের কাজের মনোবল বাড়াতে আমার এই ভিজিট।

রাজস্থলী থেকে দুমদুম্যা যাওয়ার পথে দেখা যায়, পাহাড়ে বুক চিড়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে সড়ক। এ চলার পথে রয়েছে শুধুই পাহাড় আর পাহাড়, কোথাও ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম। ড্রোজারে কাটা হচ্ছে মাটি। কোথাও কঠিন শিলা ভাঙছে হাইড্রোলিক হেমার। কোথাওবা রোলারে চাপা হচ্ছে মেগাঢম। কেউবা করছে কার্পেটিং। দুর্গম পাহাড়ে এভাবেই বিরামহীন গতিতে সীমান্ত সড়কের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

নির্মাণাধীন এই সড়ক যুক্ত করেছে বিলাইছড়ির দুর্গম ফারুয়া, জুরাছড়ির দুমদুম্যাকে। ১ম পর্যায়ের অনুমোদিত ৩১৭ কিমি. সড়কের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৯৫ কিমি.। চলমান রয়েছে ১৩২ কিমি কাজ যা এই বছরের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বাকি ৯০ কিমি. কাজ অর্থপ্রাপ্তি সাপেক্ষে শুরু করা হবে। প্রকল্পটির অগ্রগতি ৪৫ শতাংশ আর অর্থ ছাড় হয়েছে ৩৪.১৬ শতাংশ।

প্রকল্পটি বস্তাবায়িত হলে পার্বত্য জেলাসমূহের সীমান্ত এলাকায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সীমান্তের দুই পাশের অবৈধ অস্ত্র, মাদক, মানব পাচার যেমন বন্ধ হবে, তেমনিভাবে পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগের মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে হবে এবং সীমান্ত এলাকার জনসাধারণের জন্য সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা।

এছাড়া সীমান্ত এলাকার দেশি বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি সড়কটি উন্নত জাতের কৃষিজবীজ পৌঁছানোর মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ ও উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণে পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং পার্বত্য এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিতেও এই সড়কটি ভূমিকা রাখবে।

রাজস্থলী উপজেলার বাসীন্দা উচিং মারমা জানান, এই সড়কের মাধ্যমে আমাদের যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের চিত্র পাল্টে যাবে। রাজস্থলীর উপর দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী যেমন ব্যবসায় পরিচালনা করবে তেমনিভাবে পর্যটকের আনাগোনা বাড়বে। যার মাধ্যমে এই এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।

দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পুচিং মং জানান, এই সড়কের মাধ্যমে কৃষিজ পণ্যের বাজারজাতকরণ সুবিধা হবে এবং কৃষকরা পণ্যের নায্যমূল্য পাবে।
প্র্রসঙ্গত, তিন পার্বত্য জেলার সীমান্তে ধাপে ধাপে ১০৩৬ কিমি সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করা হবে।