রাউজানে বোরো ধানে পোকার আক্রমণ

কৃষকের মুখে নেই হাসি

শফিউল আলম, রাউজান

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ফসলি জমিতে রোপন করা হয়েছে বোরো ধান। বোরো ধান পাকার পর কাটা শুরু করেছে কৃষকেরা। বোরো ধানের ফলনও বেশ ভালো। কিন্তু পোকার আক্রমনে বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় পাকা ধান কেটে ঘরে তুললেও কৃষকের মুখে নেই হাসি। রাউজানের হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্তা বৃকবানপুর, বৃন্দ্বাবনপুর, জানিপথর, বানারস, এয়াসিন নগর, ডাবুয়া ইউনিয়নের কেইকদাইর, পুর্ব ডাবুয়া, সুড়ঙ্গা, হিংগলা, হাসান খীল, হিংগলা, কলমপতি, দক্ষিন হিংগলা, চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিন সর্তা, পাঠান পাড়া, নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ফতেহ নগর, নদীমপুর, গহিরা ইউনিয়নের দলই নগর, কোতয়ালী ঘোনা, রাউজান পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম গহিরা, দক্ষিন গহিরা, পুর্ব গহিরা, পশ্চিম সুলতানপুর, সুলতানপুর কাজী পাড়া, সুলতানপুর ছিটিয়া পাড়া, শরীফ পাড়া, সাপলঙ্গা, ঢেউয়া পাড়া, হাজী পাড়া, দলিলাবাদ, সাহানগর, ছত্র পাড়্,া আইলী খীল, ওয়াহেদের খীল, পুর্ব রাউজান, ঢালার মুখ, বিনাজুরী ইউনিয়নের পশ্চিম বিনাজুরী, ইদিল পুর, লেলাঙ্গারা, জাম্বইন, ৭নং রাউজান ইউনিয়নের কেউটিয়া, পশ্চিম রাউজান, রশিদর পাড়া পুর্ব রাউজান, রানী পাড়া শমসের নগর, কদলপুর ইউনিয়নের কালকাতর পাড়া, পশ্চিম কদলপুর, ভোমর পাড়া শমশের পাড়া, দক্ষিন জয়নগর, পাহাড়তলী ইউনিয়নের উনসত্তর পাড়া, বাগোয়ান ইউনিয়নের কোয়েপাড়া, পাচঁখাইন, গশ্চি, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কচুখাইন, উভলং, সামমাহদর পাড়া, উরকিরচর ইউনিয়নের মীরা পাড়া, উরকিরচর, হার পাড়া, আবুল খীল, পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের আধার মানিক, পশ্চিম আধার মানিক, হোয়ারা পাড়া বড়ঠাকুর পাড়া, উত্তর গুজরা, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই, কাগতিয়া, বদু মন্সি পাড়া সরকার পাড়া এলাকার ফসলি জমিতে শুস্ক মৌসুমে কৃষকেরা বোরো ধানের চাষাবাদ করেন। রাউজানের কিছু এলাকায় বোরো ধান কাটার পূর্বে ধানে পোকা আক্রমণ করে। পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষা করতে কীটনাশক, পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করলেও অনেক কৃষক পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারেননি বোরো ধান। রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের পাচঁপুকুরিয়া এলাকার কৃষক নুরুল আজম বলেন, শুস্ক মৌসুমে ১২ একর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করি। প্রতি একর বোরো ধানের চাষাবাদ করতে সার বীজ, সেচ, কৃষি শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। ২৫ একর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ করতে একজন কৃষকের ১০ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানান কৃষক নুরুল আজম। কৃষক নুরুল আজম আরো বলেন, বোরো ধানের ফলন ভাল হওয়ায় প্রথমে আনন্দে মেতে উঠি। হঠাৎ করে বোরো ধানের ক্ষেতে পোকা আক্রমণ হওয়ায় পোকা দমনে কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে মেশিন দিয়ে দেওয়া হলেও পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষা করতে পারিনি। পোকার আক্রমনে ক্ষতি হওয়ায় বোরো ধানের চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে। রাউজানে বোরো ধানে পোকার আক্রমণে ফলন বিপর্যয়ের কথা কৃষকরা জানালেও রাউজান উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসাইন বলেছেন, কিছু এলাকায় পোকার আক্রমণে বোরা ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রাউজানে এবার ৬২০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। ফলন আশা করছি ৪৩ থেকে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩৯ থেকে ৪১ হাজার মেট্রিক টন। এবার ফলন বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ প্রণোদনা এবং অন্যান্য উৎস হতে সর্বমোট ৫ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ধান এবং অনেক ক্ষেত্রে বীজ ধান এবং সার বিতরণ। রাউজানের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর অর্থায়নে কৃষকদের মাঝে সেচ পাইপ বিতরণ করা হয়েছে। গহিরা ইউনিয়ন এবং রাউজান পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে সেচ সুবিধার্থে পাকা ড্রেন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে, উরকিরচর ইউনিয়নে কাপ্তাই চট্টগ্রাম সড়কের মাঝে স্থাপিত একটি নাসির মুখে ঝাপ নির্মাণ করা হয়েছে, এতে পানি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জমিতে বোরো চাষ করা গেছে, ডাবুয়া ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ সেচ পাম্প স্থাপন করেছেন।
রাউজানের সংসদ সদস্য এবি এম ফজলে করিম চৌধুরীর নির্দেশনা মোতাবেক নিরবিচ্ছিন্ন সেচ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি অফিস রাউজানে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছিল যার মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস রাউজানের সহযোগিতায় কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ মিটার ,২৩০ টি ট্রান্সফর্মার এবং ট্রান্সফরমার হতে ১৩০ ফিট এর মধ্যে সেচ মেশিন বসালে বিনামূল্যে লাইন টেনে দেওয়া নিশ্চিত করা হয়েছে, এতে প্রায় ৫৮০ টি সেচ স্ক্রিম রাউজানে বসেছে। রাউজানের শস্যভান্ডার খ্যাত হলদিয়া ইউনিয়নের সর্তার খালে প্রায় ১৪ টি সেচ পাম্প বসেছে। উল্লেখ্য যে, এই পাম্পগুলো দ্বারা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি জমিতে পানি দেওয়া হচ্ছে, এক্ষেত্রে সবাই যেন সুষমভাবে পানি পায় তার জন্য কৃষি বিভাগ রাউজানের পক্ষ হতে রোস্টার করে দেওয়া হয়েছে যাতে কে কয় ঘন্টা পানি দিবে সেটা নির্ধারণ করা যায় এবং প্রতিদিন উক্ত ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ তা মনিটরিং করেছেন। বোরো আবাদ নির্বিঘœ করার জন্য কৃষি বিভাগ রাউজানে ননস্টপ সার্ভিস চালু আছে যেখানে কৃষকের যে কোন সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করা হচ্ছে।