যক্ষ্মা নির্মূলে এগুচ্ছে চট্টগ্রাম

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ

নিলা চাকমা »

মোহাম্মদ ইব্রাহিম (৩৫)। তিনি একজন রিকশা চালক। ধুমপানে আসক্ত। তিন সপ্তাহ ধরে কাশি। সন্দেহ হওয়ায় গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডটস কর্নারে পরীক্ষার জন্য কফ জমা দিয়ে যান। গতকাল (২৩ মার্চ) সকালে তিনি রিপোর্ট নিতে এসে জানতে পারেন তার যক্ষ¥া হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবিকা তাকে ওষুধপত্র, নানা পরামর্শ দিয়ে সেবা দিয়ে দেন।

‘চট্টগ্রাম জেলার যক্ষ্মা বিষয়ক প্রতিবেদন-২০২২’র সূত্রে জানা যায় জটিল এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ৯৭ শতাংশ রোগীই সুস্থ হয়েছেন। চট্টগ্রামে গত বছরে এই রোগে ১৫ হাজার ৯৯১ জন শনাক্ত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে ক্যাটাগরি-১ অনুযায়ী যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৩৩ জন, পুন-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৮, ফুসফুস আক্রান্ত ১০ হাজার ৫৪৫, ফুসফুস বহির্ভূত ৫ হাজার ৪৪৬, শিশু রোগী ৬৬৬ জন, চিকিৎসাধীন মারা গেছেন ১৬১ জন। যক্ষ্মা প্রতিরোধী চিকিৎসা (টিপিটি) পেয়েছেন ৪০২৪ জন , যক্ষ্মা প্রতিরোধী চিকিৎসা (টিপিটি) পেয়েছেন ৪০২৪ জন, শনাক্তকৃত যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় ৬ হাজার ৩৯৬ জনের।

কফ পরীক্ষা করা হয় ১৪ হাজার ৩৪৮৯ জনের। চট্টগ্রামে ডটস (স্বল্পমেয়াদী সরাসরি পর্যবেক্ষণ) কর্নার ৭৯টি, মেট্রোপলিটন ৬৪টি ও উপজেলাপর্যায়ে ১৫টি, ২২টি জিন – এক্সপার্ট সাইট, ৩টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, এবং ৮টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ডটস কর্নারের স্বাস্থ্য সেবিকা প্রজ্ঞা চাকমা বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আমাদের ডটস কর্নারে প্রতি সপ্তাহে ৪০-৫০ জন রোগী আসে।

ডটস কর্নারে কী করা হয়
কোনো রোগীর তিন সপ্তাহ ধরে কাশি থাকলে সেই রোগীর কফ জমা নিয়ে মাইক্রোস্কপি করা হয়। যক্ষ্মা রোগ ধরা পড়লে রোগীকে ওষুধ দেওয়া হয়। অর্থাৎ চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়। একই সাথে ঠিক মতো সেই রোগী ওষুধ খাচ্ছে কি-না তা মাঠকর্মীর মাধ্যমে তদারকি করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ওষুধ শেষ হয়ছে কি-না তা রোগীর ঘরে ঘরে গিয়ে মাঠকর্মীর দেখে আসে। যদি রোগীর ঘর প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দূরে হয় সেক্ষেত্রে রোগীর আত্মীয় বা বাড়ির আশপাশে শিক্ষিত লোককে বুঝিয়ে দিয়ে আসা হয়। পরে ওই লোক রোগীকে দেখাশুনা করেন এবং রিপোর্ট মাঠকর্মীকে পাঠান। এভাবে এনজিও ডটস কর্নারগুলো কাজ করে আসছে এবং সফল হচ্ছে।’

এ প্রসঙ্গে যক্ষ্মাবিষয়ক কনসালট্যান্ট ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘ফুসফুসের যক্ষ্মা ছোঁয়াচে। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে তা ছড়ায়। তাই হাঁচি ও কাশি দেয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অনেক রোগী ঠিক সময়ে ওষুধ খান না। তাই দ্রুত সেরে উঠেন না। সবার আগে রোগীর ওষুধ খাওয়ার উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। ’

২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূল প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘দেশ থেকে যক্ষ্মা নির্মূলে কাজ করছে সরকার। একই সাথে ব্রাক, মমতা, নিষ্কৃতিসহ বেশ কিছু এনজিও সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করছে। চট্টগ্রামে এই রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। আমরা আশা করি ২০৩৫ সালের মধ্যে এই রোগ নির্মূল করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবে যক্ষ্মারোগের জীবাণু বহন করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। পরিবেশ দূষণ, দারিদ্র, মাদকাসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষ্মা হার বাড়ার অন্যতম কারণ। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে।’

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী ২৪ মার্চ যক্ষ্মা দিবস পালিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার (২৩মার্চ) কর্মসূচি নেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও সহযোগী সংস্থাসমূহ যৌথভাবে এদিন সকাল ১০টায় নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভার আগে বেলুন উড়িয়ে বিশ্ব যক্ষা দিবস-২০২৩-এর উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি ও সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। এরপর একটি র‌্যালির আয়োজন করা হয়।