মেহনতীদের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন সিরাজুল ইসলাম

স্মরণসভায় মেয়র

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বন্দর ডক শ্রমিক ইউনিয়ন (সিবিএ)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ৬ দফা আন্দোলন, গণআন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন, গণঅভ্যূত্থানে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ২৪ মার্চ ১৯৭১ সালের বন্দরের নিউমুরিং ১৭নং জেটিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী এম.ভি সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসে ডক শ্রমিক, ডক বন্দরের শ্রমিক কর্মচারী ও জনতাকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। সিরাজুল হক মিয়া স্বাধীনতার পর মরহুম এম.এ হান্নানের নেতৃত্বে ডক শ্রমিকদের বুকিং সেন্টারের মাধ্যমে বাইরোটেশনে বুকিং, সরাসরি মজুরী প্রদান পদ্ধতি ও রেশন প্রথা চালু করণে তাঁর অবদান অসরিসীম। তাঁর আন্দোলনের ফলে ডক শ্রমিক পরিচালনা বোর্ড চালু হয়েছিল, সেই বোর্ডের সদস্য ছিলেন তিনি। এক এগারোর সময় তা বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে এই বিষয়ে ২৬ অক্টোবর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্ত:মন্ত্রণালয়ের সভায় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে এমওইউ চুক্তি হয়। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় বর্তমানে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি এই চুক্তিসমূহ কার্যকর করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান। এছাড়াও বন্দরে তালিকাভূক্ত শ্রমিক কর্মচারীদের বুকিং না করে, চাঁদাবাজির মাধ্যমে বহিরাগত লোকদের বুকিং দিয়ে একটি মহল কৌশলে বন্দরে শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন। তা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানান। গত শনিবার সন্ধ্যায় নীমতলাস্থ এস. কে কমিউনিটি সেন্টারে শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলামের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সিরাজুল ইসলাম স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও প্রবীণ শ্রমিক নেতা আব্দুল খালেক চৌধুরী’র সভাপতিত্বে জিয়াউর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্ত ডক বন্দর শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট্ব মো. মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিক লীগের ক্রাফ্ট ফেডারেশন বিষয়ক সম্পাদক বখতিয়ার উদ্দিন খান, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, মো. আকতার উদ্দিন। অন্যন্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন-জামাল উদ্দিন আহমেদ, শহীদুল ইসলাম বকুল, মেসবাহ উদ্দিন, মো. শাহাজাহান, আবদুল জলিল মেম্বার, বেলাল হোসেন, মো. ইকবাল, ইদ্রিস কেরানী, মো. আলম, মো. নিজাম উদ্দিন, মো. চান মিয়া, মো শাহজাহান, মো. হানিফ, মহিউদ্দিন মহাজন, আবুল হোসেন প্রমুখ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমিক নেতা বখতিয়ার উদ্দিন খান বলেন, চুক্তিকৃত দাবি সমূহ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় যারা এই কাজে গাফিলতি করবে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় শ্রমিকলীগ কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবে।
প্রধান বক্তা এডভোকেট মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, সন্দেহ হচ্ছে কোথায় যেন সরকার বিরোধী একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে। তা না হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শ্রম-প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্ত: মন্ত্রণালয়ের চুক্তি. সিদ্ধান্ত, সমঝোতা স্মারক চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না কেন? তিনি চুক্তি মোতাবেক বুকিং সেন্টারের মাধ্যমে বাইরোটেশনে বুকিং চালু করার দাবি জানান। বন্দরে তালিকাভূক্ত বেকার শ্রমিক কর্মচারীদের নিকট থেকে যারা চাঁদা দাবি করছে ও বুকিং বন্ধ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান। তিনি শ্রমিক কর্মচারীদের নিরাপত্তামূলক সরাঞ্জাম দেওয়া, পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন চালু করার আহ্বান জানান। সিসিটি ও এনসিটি শ্রমিকদের মজুরী ও ঈদ বোনাস থেকে বেআইনীভাবে টাকা কর্তন করা বন্ধ করা, শ্রমিক কর্মচারীদের পোষাক সরবরাহ করা, শ্রমিক গ্যাং ও স্টাফ ফরমেশান অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা, উইন্সম্যানদের চাকুরীতে যোগদানের তারিখ থেকে গ্র্যাচ্যুয়িটি প্রদান করা, বার্থ অপারেটর শ্রমিকদের (এক্সস্ট্রা হাউস গ্যাং) নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও অন্যান্য শ্রমিকদের ন্যায় ঈদ বোনাস দেওয়া, শ্রম আইন মোতাবেক পেনশান, গ্রুপ বীমা, বর্হিঃনোঙ্গরে পরিচয়পত্র দেওয়া, কোভিড মহামারীতে ২৪ দিনের সাধারণ ছুটিতে অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ হারে মজুরী দেওয়া, তালিকাভূক্ত প্রশিক্ষিত জাহাজ পাহারাদারদের আইএস, পিএস কোড অনুসারে বুকিং দেওয়া, কোস্টার হেজ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, বাইরোটেশনে বুকিং, পরিচয়পত্র দেওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট আহ্বান জানান। বিজ্ঞপ্তি