ব্রিকসে বাংলাদেশ

চার দেশের আদ্যক্ষর নিয়ে ব্রিক – ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন। এই চার দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল, তাদের শ্রম সস্তা, জনমিতি অনুকূলে এবং ব্যবহার করার মতো প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এই চারটি দেশ নিয়ে জোট করার উদ্যোগ ছিল আসলে রাশিয়ার। ২০০৯ সালের ১৬ জুন, রাশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় জোটের। ২০১০ সালে ব্রিকের সঙ্গে যুক্ত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। জোটের নাম হয়ে যায় ব্রিকস।
ব্রিকস জোটে মাত্র পাঁচটি দেশ থাকলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের অবস্থান বেশ শক্ত। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বাস করে এই পাঁচ দেশে। বৈশ্বিক জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) সাড়ে ৩১ শতাংশ ব্রিকসের দখলে। যেখানে বিশ্বের সাত ধনী দেশের ফোরাম জি-সেভেনের জিডিপি কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশে।
ব্রিকস একটি অর্থনৈতিক জোট। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ রাশিয়া ও চীন এর সক্রিয় সদস্য। প্রতিবেশী ভারতও ব্রিকসের আরেক সদস্য। সদস্য সংখ্যায় সম্প্রসারিত হতে চলেছে ব্রিকস।
বিদ্যমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্রিকস এখন যথেষ্ট সক্রিয় ও চাঙাভাব দেখাচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক জোট হলেও পশ্চিমা দেশগুলোর ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েই হাজির হচ্ছে ব্রিকস। সদস্যসংখ্যা বাড়িয়ে সেই বার্তাটাই দিতে চাইছে জোটটি।
বাংলাদেশ অবশ্য কয়েক বছর আগে থেকেই ব্রিকসের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্রিকস-ব্যাংকের সদস্য হয়। এই ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক নাম দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি), যা ব্রিকস সদস্যরা প্রতিষ্ঠা করেছিল ২০১৫ সালে। মূলত ২০২০ সালের শেষের দিকে এনডিবির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের নতুন সদস্য নেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল। কয়েক দফা আলোচনার পর এনডিবি নতুন সদস্য হিসেবে তিনটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। সেই তিন দেশ ছিল বাংলাদেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও উরুগুয়ে।
৫ হাজার কোটি ডলার নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এনডিবি। তবে এখন তাদের অনুমোদিত মূলধনের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সদস্য হতে ১ শতাংশ শেয়ার কিনেছে। আর এখন পর্যন্ত এই ব্যাংক ৮০টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে, এতে অর্থায়নের পরিমাণ ৩ হাজার কোটি ডলার।
আন্তর্জাতিকভাবে বলা হয়ে থাকে, বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানাতেই দ্য নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর ব্রিকস আনুষ্ঠানিকভাবেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বড় ধরনের সংস্কারের পক্ষে। ফলে নতুন নতুন দেশ ব্রিকস জোটে ঢুকলে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের সংস্কারের দাবি আরও জোরালো হবে।
অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে যোগ দিতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে বাংলাদেশ। কেবল বাংলাদেশ নয়, সব মিলিয়ে ২০টি দেশ ব্রিকস জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ২০টি দেশ সদস্য হতে চাইলেও আলজেরিয়া ও সৌদি আরবের আগ্রহই আন্তর্জাতিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এই দুই দেশ তেল উৎপাদন করে। ধারণা করা হচ্ছে, তেলের উৎপাদন ও দর নির্ধারণে ব্রিকসের মধ্যে থেকে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চেষ্টা করবে।
বাংলাদেশকে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সম্পর্কের বহুধাকরণ করতে হবে। ব্যবসা–বাণিজ্যের সুযোগ ও ঋণের প্রাপ্যতার সুযোগকে বিস্তৃত করতে হবে। বাংলাদেশ যে ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করতে চাচ্ছে, সেটির সঙ্গে ব্রিকসে যোগদানকে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ ও যৌক্তিক।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক আমরা যত বহুধাভিত্তিক করতে পারব, ততই ভালো। ব্যবসা–বাণিজ্য ও অর্থায়নে এই যোগদানের একটা ভালো ভূমিকা থাকবে।