বেড়েছে গম, মাছ ও গরুর মাংসের দাম

বাজারদর

নিজস্ব প্রতিবেদক »

বাজারে বেড়ে চলেছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, সয়াবিন, চিনি, পেঁয়াজের পর এবার বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। সাতদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি আটায় বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে শাকসবজির দাম স্থিতি থাকলেও মাছ ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার নগরের খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজার ও কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে এক কেজি খোলা আটার দাম ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। খোলা ময়দা প্রতি কেজি ৬৬ থেকে ৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে মোড়কজাত (প্যাকেট) আটার দামও বেড়েছে। দুই কেজির দাম বেড়ে হয়েছে ১২৬-১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও ছিল ১১০-১১৫ টাকা।

জানা যায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার খোলা আটার দাম এক মাসে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং এক বছরে ৬৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। মোড়কজাত আটার দাম এক মাসে ৫ দশমিক ২২ শতাংশ এবং এক বছরে ৫৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে।

বৃহস্পতিবার খাতুনগঞ্জের এমবি ট্রেডার্সের ম্যানেজার দিলীপ সিকদার সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘টিকে গ্রুপের ৫০ কেজি ওজনের ময়দা বিক্রি হচ্ছে ২,৯২০ থেকে ২,৯৫০ টাকায়। আকিজ গ্রুপের ময়দার দাম ৩০৫০ টাকা। কেজি প্রতি ৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে খোলা আটার দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। এ সপ্তাহে কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১০ টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমরা এ সপ্তাহে ২৮৫০ টাকা থেকে ২৯০০ টাকার মধ্যে কিনেছি। প্রতি কেজি ৫৭ টাকা থেকে সাড়ে ৫৭ টাকায় কিনতে হয়েছে। এরপর পরিবহন খরচ আছে। তারপরও বাজারে এ দামে আটার বস্তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

খাতুনগঞ্জে খোলা আটা কিনতে এসে হতাশা প্রকাশ করেন বোয়ালখালীর খুচরা বিক্রেতা জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, এখন খোলা বাজারে আটার দাম চালের চেয়ে বেশি। এরকম হলে আটা আর বিক্রি করা যাবে না।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘সরকারকে চাল, তেল, আটার মতো নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে ভোক্তাদের বিষয় ভাবতে হবে। বর্তমান সবকিছুর দাম বাড়তি। বাজারে এমন কোন পণ্য নেই দাম বাড়েনি। সবকিছু সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিয়য়ে সরকারকে কঠোর মনিটরিং করতে হবে বলে তিনি জানান।

সূত্রে জানা যায় দেশে বছরে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টন গম দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়। আমদানির বড় অংশ আসে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। বাকিটা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। বৈশ্বিক বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার বাজারে।

এদিকে, বাজারে শীতকালীনসহ সব ধরনের সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে। দুয়েকটি সবজির দাম বাড়লেও গত সপ্তাহের বাজার দরে প্রায় শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে শাকসবজি কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। তবে আর কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ আরও বাড়বে। ফলে দাম আরও কমবে বলে জানান সবজি বিক্রেতারা।

এদিকে গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কিছুটা বেড়েছে সামুদ্রিকসহ সব ধরনের মাছের। গরু ও খাসির মাংসের দাম বাড়লেও মুরগির মাংসের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বৃহস্পতিবার নগরীর কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, টমেটো ৮০ টাকা, তিত করলা ৬৫-৭০ টাকা, লাউ ২৮-৩০ টাকা, পটল ৩০-৪০ টাকা, ঝিঙ্গা ৪৫-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, আলু ২৫ টাকা, ঢেড়স ৫০-৬০ টাকা, শসা ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ৭০-৮০ টাকা, মুলা ৫০-৬০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকা। এছাড়া কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এদিকে দাম কিছুটা বেড়ে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০ টাকায় যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা, বরবটি ৫৫-৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ টাকা, শিম ৭০-৮০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়।

কাজির দেউড়ি বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. শাহ আলম বলেন, ‘এই সপ্তাহে শাকসবজির দাম বাড়েনি। গত সপ্তাহের বাজার দামেই বেশিরভাগ সবজি আমরা বিক্রি করছি।’

কাজির দেউড়ি বাজারে আসা গৃহিণী শামিন আক্তার বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) শাকসবজির দাম নাগালের মধ্যে আছে। তবে মাছ ও মাংসের দাম কিছুটা বেড়েছে। শাকসবজির দাম আংশিক কমলেও বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। বাজার করতে আসলে হতাশ হয়ে যায়। প্রশাসনকে কিছুদিন পর পর তদারকির মাঠে দেখা যায়, তারপর ঝিমিয়ে পড়েন।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লইট্টা মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, তেলাপিয়া মাছ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১০০-১২০ টাকায়, কার্প মাছ কেজি ২৫০-৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৩০-১৫০ টাকা, কৈ মাছ ২০০-২২০ টাকা, টেংরা ২৮০-৩২০ টাকা, মলা মাছ ২৮০-৩২০ টাকা, রুই মাছ ১৮০-৩২০ টাকা ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-৩৫০ টাকায়। এছাড়া রূপচাঁদা কেজি ৫৫০-৬০০ টাকা ও ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০০-১২০০ টাকা।

দেশি মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২০ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৮০০ ও খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ডিমের ডজন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।

গরুর মাংস বিক্রেতা মো. জাহিদ বলেন, ‘ভারত থেকে গরু না আসাতেই দিন দিন গরুর মাংসের দাম বাড়ছে। এখন আমাদের দেশীয় গরুর উপর নির্ভর হতে হচ্ছে। তাছাড়া গরুর ভূষি ও অন্যান্য খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে খামারিরা গরুর দাম বাড়িয়েছে।’