বৃষ্টি হলেই জমছে পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক »
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিমাপক যন্ত্রে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে ২৬ মিলিমিটার। যেহেতু সকাল থেকে নগরীর রাস্তায় পানি, তাহলে ধরে নেওয়া যায় এই বৃষ্টির কারণে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে। সেই হিসেবে রাতের ৬ ঘণ্টায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়েছে নগরী।
যে নগরীতে টানা ৬০ থেকে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও এতো বেশি পানি জমতো না, সেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা খরচের পরও সামান্য বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে নগরী। এর আগে গত কয়েক মাস আগে মাত্র ১১ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমেছিল। জলাবদ্ধতা নিরসনে এতো খাল খনন, খালের মাটি অপসারণ কিংবা নালা ও খালের সাথে সংযোগ স্থাপনের পরও পানি উঠছে কেন?
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় জলাবদ্ধতা নিরসনে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ্ আলীর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন খাল খননের পাশাপাশি অনেকগুলো খাল চওড়া করেছি। একইসাথে খালগুলোর গভীরতা বাড়ানো হয়েছে। খালের উভয় পাশে রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর সাথে যুক্ত খালগুলোর মুখে রেগুলেটর বসানোর কাজ চলছে। নালা ও খালের সাথে সংযোগ রক্ষাকারী ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। নগরীতে জলাবদ্ধতা হয় এমন পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
কিন্তু তারপরও পানি উঠছে কেন? এ বিষয়ে লে. কর্নেল শাহ্ আলী বলেন, ‘প্রথমদিকে খালের মুখে বাঁধ থাকায় পানি নামতে পারেনি তাই পানি জমেছে। কিন্তু এখন কোনো খালের মুখে বাঁধ নেই। সব বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। তবে বাইপাস দিয়ে পানি নামতে হয় বলে একটু সময় নিচ্ছে, তাই পানি নেমে যেতে দেরি হওয়ায় কিছু এলাকায় সামান্য সময়ের জন্য পানি জমে থাকছে।’
এদিকে গত মঙ্গলবার মধ্য রাতের পর থেকে বৃষ্টির কারণে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, শুলকবহর, চকবাজার, বাকলিয়াসহ প্রভৃতি এলাকায় পানি বেশি ছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত পানি জমা ছিল। সকাল ১০টার পর বৃষ্টির মাত্রা কমে আসে, পরবর্তীতে সারাদিন আর বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে, থেমে থেমে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, জলাবদ্ধতা নিরসনে তিন বছর মেয়াদী মেগা প্রকল্পটি ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন পেলেও বাস্তবে এর কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের এপ্রিলে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হলেও সিডিএ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। তিন বছরে এ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৫১ শতাংশ। মেগা প্রকল্পের আওতায় নগরীর ৩৬টি খাল আরএস শিট অনুযায়ী পূর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, খালের উভয় পাশে ১৫ ফুট চওড়া রোড ও খালের মুখে ৫টি সøুইস গেট বসানো, ৪২টি সিল্ট ট্র্যাপ (বালি জমার স্থান), ৩টি জলাধার নির্মাণ, ৩৬টি খাল খননের মাধ্যমে ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন, ৪২ লাখ ঘনমিটার কাদা অপসারণ, নতুন করে ১০ দশমিক ৭৭ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ, ১ লাখ ৭৬ হাজার মিটার দীর্ঘ রিটেনিং দেয়াল নির্মাণ এবং খালের উভয় পাশে ৮৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করার কাজ রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামবাসী জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এর মেয়াদ আরো একবছর বাড়ানো হয়েছে।