বিশ্বমানের শপিংমল পাচ্ছে চট্টগ্রাম

চকবাজারে কাল উদ্বোধন হচ্ছে শেঠ প্রপার্টিজের ‘বালি আর্কেড’

থাকছে তিনটি সিনেপ্লেক্স, কিডস অ্যামিউজমেন্ট জোনসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম

ভূঁইয়া নজরুল <<<
বিশ্বমানের বন্দর চট্টগ্রাম। এই বন্দরকে ঘিরে চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বমানের শহরে রূপ নিতে যাওয়া চট্টগ্রামে বিশ্বমানের শপিংমল নিয়ে হাজির হচ্ছে শেঠ প্রপার্টিজ। নগরীর চকবাজার এলাকায় ‘বালি আর্কেড’ নামে ১১ তলার একটি ‘সুপার মল’ আগামীকাল শুক্রবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।
পৃথিবীর বড় বড় শহরের বিখ্যাত শপিংমলগুলোতে শুধু কেনাকাটার পণ্যই থাকে না, থাকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমের পাশাপাশি আধুনিক নগর জীবনের জন্য সিনেপ্লেক্স কিংবা সিনেমা হল, শিশুদের জন্য কিডস জোন, তরুণদের জন্য ব্যায়ামাগার, রোমাঞ্চকর মুভি থিয়েটার, কনভেনশন হল, বিউটি পার্লার, ফুডজোন থেকে শুরু করে আরো অনেক কিছু। এমন সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শপিংমল চট্টগ্রামে নেই বললেই চলে।
চট্টগ্রামে ২০০৭-২০০৮ সালে চালু হয়েছিল প্রথম শপিং মল স্যানমার ওশান সিটি। ফুড কোর্ট ও নির্মাণশৈলির কল্যাণে জনপ্রিয় হয়ে উঠা সেই শপিং মল এখনো নগরীর শীর্ষ শপিংমলগুলোর মধ্যে অন্যতম। স্যানমার ওশান সিটির ১২ বছর পর এসে চট্টগ্রামে বিশ্বমানের শপিংমল গড়ে উঠছে নগরীর চকবাজারে।
যা থাকছে এই সুপার মলে
৪২ কাঠা জায়গার উপর গড়ে তোলা ১১ তলার বালি আর্কেডে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে দৃষ্টিনন্দন ড্যান্সিং ফোয়ারা। দেখেই চোখ জুড়িয়ে যাবে দর্শনার্থীদের। ফোয়ারা পেরিয়ে শপিং মলের ভেতরে প্রবেশ করলেই ১৪ হাজার বর্গফুটের বিশাল লবি। প্রবেশ গেইট বরাবর রাখা হয়েছে স্কেলেটর। উঠা ও নামার পৃথক দুই স্কেলেটর পঞ্চম তলার ফুড কোর্ট পর্যন্ত রয়েছে। আর নিচ থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত পুরো জায়গাটি খালি। উপরে রাখা হয়েছে স্ক্রিন। স্ক্রিনে ভেসে উঠা বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে দেখতে স্কেলেটর দিয়ে উঠতে পারবে দর্শনার্থীরা।
শপিং মলের প্রথম তলায় থাকছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শৈল্পিক, স্বদেশপল্লী, ‘র’ নেশন, বাটা, এপেক্স, স্পার্ক গিয়ার, স্টেপ ফুটওয়্যারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড। এই ফ্লোরে মূলত সবগুলো দোকানের সাইজ সুবিশাল। দ্বিতীয় তলায় থাকছে কসমেটিকস, জুয়েলারি, গিফট ও কিডসের ৩৭টি দোকান। তৃতীয় তলার পুরোটা থাকছে লেডিস আইটেম। তবে এই ফ্লোরে একটি কর্নার রাখা হয়েছে যেখানে লেডিস ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে শেঠ প্রপার্টিজের পরিচালক (অপারেশন) তুলু উশ শামস বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীরা নিজেদের নিজস্ব অনেক আইটেম কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে শুধু এই কর্নারটি রাখা হয়েছে। এছাড়া লেডিস ফ্লোরটি পরিচালিত হবে নারীদের দিয়ে।’
চতুর্থ তলায় থাকছে জেন্টস আইটেম। পঞ্চম তলায় মোবাইল এবং ইলেকট্রনিক্স দোকান। ৬ষ্ঠ তলায় রয়েছে ফুড কোর্ট। ২৬টি স্টল রয়েছে ফুড কোর্টে। ফুড কোর্টে রাখা হয়েছে বিশাল স্পেস। এখানে জাহাজের নোঙরের মতো মোটা দঁড়ি রাখা হয়েছে। এখানে জাহাজ বা নৌকা ভেড়ানোর ঘাটের একটি আবহ তৈরি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে শেঠ প্রপার্টিজের পরিচালক (অপারেশন) তুলু উশ শামস বলেন, ‘আমরা এই ভবনের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে মাটির নিচে নৌকার ভগ্নাবশেস পেয়েছি। এই স্থানে একসময় নৌকা ভিড়তো। তাই আমরা ফুডকোর্টের নাম দিয়েছি পিয়ার ২২৭।’
পিয়ার ২২৭ কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিয়ার মানে হলো ঘাট। আর ২২৭ এই ভবনের হোল্ডিং নম্বর।
ইতিহাসের সাথে মিশেল এই নামের পাশাপাশি তিনটি ফ্লোর ওপেন রেখে বাইরের অংশে গড়ে তোলা হয়েছে বারবিকিউ জোন। মাথার উপরে থাকছে লাইটিং। উন্মুক্ত স্থানে বসে উপরের খোলা অংশ এবং বাইরের সিটি ভিউতে সত্যিই মুগ্ধ হবে দর্শনার্থীরা।
৭ম ও ৮ম তলায় রাখা হয়েছে কিডস অ্যামিউজমেন্ট জোন। শিশুদের বিভিন্ন খেলার উপকরণ, বুদ্ধি ও শারীরিক বিভিন্ন খেলা যেমন থাকবে এই জোনে তেমনিভাবে থাকবে ৭ডি মুভি হলও।
২০০ আসনের ৭ডি মুভি হলে দর্শনার্থীরা মরুভূমির অনুভূতি যেমন পাবেন তেমনি মিলবে এন্টার্কটিকা মহাদেশের অনুভূতিও। এবিষয়ে তুলু উশ শামস বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমরা বিশেষ নজর দিয়েছি। সারাদেশে সর্বপ্রথম আমরাই এ ধরনের একটি জোন করছি। শিশুরা এতে উপকৃত হবে। চট্টগ্রামে শিশুদের বিনোদনের সুযোগ খুব সীমিত।’
নবম তলায় রাখা হয়েছে আধুনিক জিম সেন্টার। একটি রেস্টুরেন্ট এবং কনভেনশন হল। প্রায় ২০০ আসনের এই কনভেনশন হল থেকে পুরো শহর দেখা যাবে। কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠান করে রেস্টুরেন্টে এসে খাবে। ১০ম ও ১১ তলায় রাখা হয়েছে ৪২০ আসনের তিনটি সিনেপ্লেক্স। সিনেপ্লেক্সে প্রবেশের পথটিও অনন্য। রয়েছে পৃথক লবি ও টিকেট কাউন্টার। একটি পয়েন্ট থেকে টিকেট কেটে দর্শনার্থীরা পৃথক পৃথক সিনেপ্লেক্সে যেতে পারবে। ভবনের টপ ফ্লোরে রয়েছে এবাদতখানা।
পুরো মলেই কাঁচের খেলা
আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এই শপিংমলটির পুরোটা জুড়ে কাঁচের খেলা রয়েছে। প্রতিটি দেয়াল ও ফ্লোর বিভিন্ন ধরনের কাঁচ দিয়ে সজ্জিত। এমনকি প্রতিটি দোকানের নিজস্ব যে ইন্টেরিয়র করা হয়েছে সেখানে ধাপগুলোও করা হয়েছে কাঁচের। আবার সবকটি দোকানের ধাপগুলো প্রায় একই রকমের।
এ বিষয়ে তুলু উশ শামস বলেন, ‘আমরা পুরো মার্কেটের ইন্টেরিয়র একজনকে দিয়ে করিয়েছি। একইসাথে দোকানগুলোতেও যাতে তা মেইনটেইন করা হয় তা চেষ্টা করা হয়েছে।’
ভবনজুড়ে ফায়ার এলার্ম।
পুরো শপিং মলের যেকোনো স্থানে আগুন লাগলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি বের হয়ে আসবে। এজন্য প্রতিটি ফ্লোরের লবিতে ফায়ার এলার্ম রয়েছে। কোথাও আগুন জ্বললেই ঝর্নার মতো পানি পড়বে।
৯১টি কার পার্কিং ও ৬টি লিফট
পুরো শপিং মলে চারটি প্যাসেঞ্জার লিফট, একটি ক্যাপসুল লিফট, দুটি কার্গো লিফট এবং একটি স্কেলেটর রয়েছে। এছাড়া দুই প্রান্তে দুটি সিঁড়িও রয়েছে। নিচতলা এবং একটি বেইজমেন্ট রাখা হয়েছে পার্কিংয়ের জন্য।
পার্কিং বিষয়ে তুলু উশ শামস বলেন, ‘অটোমেটিক পার্কিং সিস্টেম রয়েছে। গাড়িটি যখন পার্র্কিংএ ঢুকবে তখন একটি টোকেন পেয়ে যাবে। আবার বের হওয়ার সময় প্রবেশের টাইমিং অনুযায়ী পার্কিং ফি দিয়ে বের হয়ে যাবে।’
ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট কীভাবে হবে?
চকবাজার এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। বালি আর্কেড চালু হলে এখানকার ট্রাফিক সিস্টেম কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা জানতে চাইলে তুলু উশ শামস বলেন, ‘চকবাজার তেলিপট্টি মোড় থেকে প্যারেড কর্নার পর্যন্ত পুরো এলাকার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নিজস্ব জনবল দিয়ে করবো। এতে এই এলাকার যানজট যেমন কমে আসবে একইভাবে ট্রাফিকও একটি সিস্টেমে পরিচালিত হবে।’ তবে এই প্রকল্পে দুটি প্রধান সড়ক রয়েছে। শপিং মলের একটি রোড পেয়েছে চকবাজার ধুনির পুলের দিকে এবং প্রধান গেইটটি চকবাজার পোস্ট অফিসের সামনে। যানজট নিরসনে এটিও একটি সহায়ক দিক হতে পারে।
রয়েছে ফ্রি ওয়াইফাই ও অ্যাপস
পুরো শপিং মলে ফ্রি ওয়াইফাই রয়েছে। একইসাথে পুরো মার্কেটের একটি অ্যাপস রয়েছে। সেই অ্যাপসে সব দোকানের পণ্যের তালিকা থাকবে। ক্রেতারা চাইলে সেই অ্যাপস দেখে পণ্য পছন্দও করতে পারবে।