বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ

অবরোধের দ্বিতীয় দিন

সুপ্রভাত রিপোর্ট »

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিন গতকাল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সুপ্রভাত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

কর্ণফুলী
কর্ণফুলী উপজেলায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে মুখোশ পরা দুর্বৃত্তরা। এ সময় আহত হয়েছেন গাড়ির চালক মো. মোজাম্মেল (৬০)।

গতকাল বুধবার সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীবাহী চট্টমেট্রো জ ০৫-০২৭০ নাম্বারের বাস পটিয়ার দিকে যাওয়ার সময় কর্ণফুলীর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ভেল্লাপাড়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীবাহী বাসটি চট্টগ্রাম শহর থেকে পটিয়ার দিকে যাওয়ার পথে ভেল্লাপাড়া ব্রিজ এলাকায় পৌঁছালে পটিয়ার দিক থেকে মুখোশ পরা ২০-৩০ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে। তখন আতঙ্কিত যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যায়। একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে কর্ণফুলী ফায়ার সার্ভিসের একটি দল দ্রুত গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কর্ণফুলী মডেল ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ শোয়াইব হোসেন চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল ৮টায় যাত্রীবাহী বাসটিতে আগুন দেওয়ার খবর আসে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কর্ণফুলী থানার উপপরিদর্শক মোবারক হোসেন বলেন, পটিয়ার দিক থেকে কিছু যুবক এসে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে মুখোশ পরা ছিলেন। তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় আহত বাসচালককে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া
কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কের রাঙ্গুনিয়ায় গাছ কেটে সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এ সময় তিনটি যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংয়োগ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে চন্দ্রঘোনা হাইব্যার গোট্টার অর্ধ কিলোমিটার এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের হাইব্যার গোট্টা এলাকায় ভোর পাঁচটায় গাছের গুড়ি ফেলে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করা হয়। এ সময় আটকে থাকা পাথরবোঝাই লড়ি ও একটি সিএনজি অটোরিক্সা ভাঙচুর করে। পরে লরি দুটি অগ্নিসংযোগ করে অবরোধকারীর পালিয়ে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে প্রায় দু’ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সড়ক থেকে গাছ সরিয়ে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, চন্দ্রঘোনা এলাকায় গাছ কেটে সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।

মিরসরাই
মিরসরাইয়ে পিকেটিং ও মিছিল করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তারা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। মিছিল শেষে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে। অপরদিকে বারইয়ারহাটে অবরোধবিরোধী মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। এ সময় বারইয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকন, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সোনা মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলী আহসানসহ পৌর ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বারইয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকন বলেন, জামায়াত-বিএনপির ডাকা অবরোধে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে তাই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি রাজপথে রয়েছেন। হিঙ্গুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া বলেন, আমরা সব সময় রাজপথে রয়েছি। বিএনপি-জামায়াতকে নাশকতা করতে দেয়া হবে না। বারইয়ারহাট ও হিঙ্গুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সব সময় বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা রুখতে মাঠ থাকবে।

জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক শাহীনুল ইসলাম স্বপন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের নির্দেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিএনপির নেতা কর্মীরা রাজপথে অবরোধের সমর্থনে কর্মসূচি পালন করেছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, আমরা বিজিবিসহ মহাসড়কের মিরসরাইয়ের পুরো এলাকা টহল দিয়েছি। কোথাও কিছু দেখলাম না। তিনি আরো বলেন, মিরসরাইয়ে প্রশাসন নাশকতা রোধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সীতাকুণ্ড
সীতাকুণ্ডে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলন্ত একটি রড বোঝাই লরিতে দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোলবোমার আঘাতে পুড়ে গেছে লরি। চালক ও সহকারী আহত হয়েছেন। বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পৌরসভার পন্থিছিলা এলাকায় দুই দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এ ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। দগ্ধ হওয়া লরিটি চট্টগ্রাম ৪ আসনের সাংসদ দিদারুল আলমের বলে তিনি স্বীকার করেন।

খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘটনার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলাউদ্দিন, মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তোফায়েল আহমেদ ও বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সাংসদ দিদারুল আলম ফোনে জানান, ‘বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে মানুষের মনে ভীতি তৈরির জন্য ১৩, ১৪ সালের মত অগ্নিসন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমার একটা না দশটা গাড়ি জ্বালালেও হরতাল অবরোধে সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হবে না।’