মহামারিকালে আনন্দের জয়

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।

বিজয় কেতন ওড়ালো বাংলাদেশ,সর্বনিম্ন রানে বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া

সুপ্রভাত ক্রীড়া ডেস্ক »

অসাধারণ এক ম্যাচ জয়ে বিজয় কেতন ওড়ালো বাংলাদেশ। প্রথম তিন টি-টোয়েন্টি দিয়ে সিরিজ জয়, আর পঞ্চম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে অলআউট করে লজ্জায় ডোবালো সফরকারীদের। এমন দোর্দন্ড প্রতাপে জেতার পর চতুর্থ টি-টোয়েন্টি নিয়ে আক্ষেপ হতেই পারে বাংলাদেশের।  তারপরেও মহামারীকালে এই জয় বড়ই আনন্দের।

টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের সর্বনিম্ন ৬২ রানে অল-আউট হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ১৪ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছে তারা।

এর আগে ২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউদাম্পটনে ৭৯ রানে অল-আউট হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, টি-টোয়েন্টিতে এতদিন সেটিই ছিল তাদের সর্বনিম্ন স্কোর।

উপমহাদেশের উইকেট এমনিতেই স্পিন সহায়ক। বাংলাদেশে আসার আগে সে ভাবনা ভেবেই এসেছে অস্ট্রেলিয়া। স্কোয়াডে তিনজন বিশেষায়িত স্পিনারও রেখেছিল তারা। কিন্তু খেলা দেখে মনে হয়েছে তাদের হোম ওয়ার্কে ঘাটতি ছিল।

বাংলাদেশের স্পিন সামলাতে যে দক্ষতা প্রয়োজন তা ছিল না অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের। মন্থর উইকেটে বাংলাদেশি স্পিনারদের খেলতে রীতিমতো খাবি খেয়েছে অজি ব্যাটসম্যানরা। এর সুফল পেয়েছে স্বাগিতিকরা।

পাঁচ ম্যাচ সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৬০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করে ১২২ রানের পুঁজি গড়া বাংলাদেশ অজিদের ৬২ রানেই অলআউট করে দেয়। ৪ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন আপ গুড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান।

এই ৪ উইকেটে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করলেন সাকিব। এতে অনন্য এক রেকর্ডের মালিক হয়েছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ১০০ উইকেট ও ১ হাজার রানের মাইলফলক গড়লেন তিনি।

৪ উইকেট নিয়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইন আপ গুড়িয়ে দেন সাকিব আল হাসান।

এদিন মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ১২২ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ দল। ১২৩ রানে লক্ষ্য টপকাতে নেমে শুরু থেকেই দিশেহারা অজিরা। শুরুটা হয় ওপেনার ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের উইকেট দিয়ে।

অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে নিয়ে সফরকারীদের ইনিংস শুরু করেন তিনি। তাকে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের ফেরান বাঁহাতি স্পিনার নাসুম। অফ সাইডে নাসুমের শর্ট লেন্থের বল দ্রুত খেলতে চেয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ান। ভাগ্য সহায় হয়নি তার, বল ব্যাট মিস আঘাত হানে স্টাম্পে। নিজের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান নাসুম। ৩ বলে ৩ রান করে আউট হন স্ক্রিস্টিয়ান।

সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশি বোলারদের মূর্তিমান আতঙ্ক বনে গেছেন মিচেল মার্শ। তাকেও দ্রু নিজের শিকারে পরিণত করেন নাসুম। নিংসের চতুর্থ ও নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে লেগবিফোরের ফাঁদে ফেলে ৪ রানে থাকা মার্শকে আউট করেন তিনি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে নিজের প্রথম ওভার বল করতে আসেন সাকিব আল হাসান। এসেই বাজিমাত এই বাঁহাতি স্পিনারের। নিজের দ্বিতীয় বলে বোল্ড করেন ওয়েডকে।

পরে বল হাতে সফলতা পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ম্যাকডরমটকে নিজের বলে নিজেই ক্যাচ নিয়ে ফেরান তিনি। এরপরের ব্যাটসম্যানরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। পরের ৬ উইকেটের ৩টি দখল করেন সাকিব। বাকি ৩টি নেন একাদশে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে নিজের প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তুলে নেন অ্যালেক্স ক্যারি (৩) ও ময়সেস হেনরিকসকে (৩)। স্লোয়ারে বোল্ড ক্যারি, খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন হেনরিকস। নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে উইকেট মেইডেন সাকিবের।

অ্যাশটন টার্নারকে (১) ফেরান কাভারে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচে পরিণত করে। আর তাতেই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন টাইগার অলরাউন্ডার। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিবই ১ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা একমাত্র ক্রিকেটার। পরে সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ৬২ রানে অলআউট অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ জয় পায় ৬০ রানের বিশাল ব্যবধানে।

এর আগে ওপেনিং জুটিতে মাত্র ৪ ওভার ৩ বলে থেকে ৪২ রান ওঠে বাংলাদেশ দলের স্কোরবোর্ডে। তাতে মনে হচ্ছিল বড় রানের সংগ্রহ পেতে চলেছে টাইগাররা। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে টার্নারের করা তৃতীয় বলে সজোরে হাঁকিয়েছিলেন মেহেদী। ব্যাটে-বলে এক হয়নি, হাত থেকে ফসকে যায় ব্যাট। মিড উইকেটে ধরা পড়েন অ্যাগারের হাতে। ২টি চারের মারে ১২ বলে ১৩ রান করে আউট হন মেহেদী।

মূলত এরপরেই বদলে যায় বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ের প্রেক্ষাপট। এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ায় অজিরা। মন্থর উইকেটের মতো মন্থর হয়ে যায় বাংলাদেশ দলের রান তোলার গতি। মেহেদীর আউটের পর উইকেটে আসেন সাকিব। তবে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি নাঈম শেখ। ক্রিস্টিয়ানকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে তিনিও ধরা পড়েন অ্যাগারের হাতে, ফেরেন ২৩ বলে ২৩ রান করে।

ইনিংসের দশম ওভারের শেষ বলে জাম্পাকে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হন সাকিব। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে ফেরেন ২০ বলে ১১ রান করে। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি, অ্যাগারের বলে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১৪ বলে ১৯ রান করে।

ওপেনিংয়ে জায়গা হারিয়ে চার নম্বরে নামা সৌম্য আজ কোনোরকম দুই অঙ্কের কোটা ছুঁয়েছেন, ক্রিস্টিয়ানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ১৬ রান করে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে প্রথমবারের মতো সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আক্ষেপ বাড়ালেন আরও। নিজের খেলা প্রথম ৬ বলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি তিনি। তার প্রভাব পড়ল স্কোর বোর্ডে। আফিফ হোসেন ১০ রান করে আউট হলে ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২২ রানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১২২/৮ (শেখ মেহেদী ১৩, নাঈম ২৩, সাকিব ১১, সৌম্য ১৬, মাহমুদউল্লাহ ১৯, নুরুল ৮, আফিফ ১০, মোসাদ্দেক ৪*, সাইফউদ্দিন ০, মোসাতফিজ ০*; টার্নার ১/১৬, অ্যাগার ১/২৮, জাম্পা ১/২৪,এলিস ২/১৬, ক্রিস্টিয়ান ২/১৭, সোয়েপসন ০/১৪)

অস্ট্রেলিয়া : ১৩.৪ ওভারে ৬২ অলআউট (ক্রিস্টিয়ান ৩, ওয়েড ২২, মার্শ ৪, ম্যাকডারমট ১৭, ক্যারি ৩, হেনরিকেস ৩, টার্নার ১, অ্যাগার ২, এলিস ১, সোয়েপসন ১*, জাম্পা ৪; শেখ মেহেদী ০/২০, নাসুম ২/৮, মোস্তাফিজ ০/৩, সাইফউদ্দিন ৩/১২, সাকিব ৪/৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৯)।

ফল : বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।

সিরিজ : পাঁচ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ৪-১ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : সাকিব আল হাসান।

ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ সিরিজ : সাকিব আল হাসান।