বিএনপির মধ্যে ‘না’রোগ দেখা দিয়েছে : তথ্যমন্ত্রী

বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার শুরু

নিজস্ব প্রতিবদেক »
‘আমি দেখতে পাচ্ছি বিএনপির মধ্যে একটা ‘না’ রোগ দেখা দিয়েছে, সবকিছুতেই যেন না বলা। সংলাপে যাবে না, নির্বাচনে যাবে না, এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও যাবে না। এখন আমি আশঙ্কার মধ্যে আছি, না না বলতে বলতে বিএনপিটা কখন নাই হয়ে যায়।’
গতকাল রোববার বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের রজতজয়ন্তী এবং ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন পূর্ববর্তী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের দল বিএনপি ও জামায়াত বাংলাদেশে যদি নেতিবাচক রাজনীতি না করত এবং স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র না করত তাহলে বাংলাদেশ আরও অনেক বেশি এগিয়ে যেত। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে অনুরোধ জানাব, উনি শিক্ষিত লোক হয়ে যেন অশিক্ষিতের মতো কথা না বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগে তিনবার দেশ পরিচালনা করেছেন, এখন চতুর্থবার দেশ পরিচালনা করছেন, এ সময়েই দেশের অনেক অগ্রগতি-উন্নতি হয়েছে।
বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্যের ব্যাপারে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমি জ্ঞানী এবং বুদ্ধিমান মানুষ বলে জানতাম, কিন্তু তিনি এরকম বুদ্ধিহীন হয়ে গেছেন এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন এটা আমাকে আশ্চর্য করেছে।
তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়েছে, এটি পৃথিবীর সামনে উদাহরণ। বাংলাদেশ সব সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছে। ১৯৭০-৭১ সালে পাকিস্তান আমাদের চেয়ে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল। মাথাপিছু আয় ৫০ শতাংশ বেশি ছিল। সেই পাকিস্তান আজ মানব উন্নয়ন, সামাজিক, অর্থনৈতিক সূচকসহ সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে। এমনকি মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে আমরা ভারতকেও অতিক্রম করেছি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগে বাংলাদেশে শতকরা ৪১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে ছিল, সেটি এখন ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এগুলো আমার বক্তব্য নয়, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের বক্তব্য। তাদের সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
বিটিভি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার উদ্বোধন
দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ২৪ ঘণ্টা বিটিভি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র দেখবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষ। একই সাথে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সব অনুষ্ঠান বিটিভি অ্যাপসের মাধ্যমে দেশ বিদেশে যেকোন জায়গা থেকে দেখতে পারবে দর্শকরা।
গতকাল বিকাল ৫টায় ২৪ ঘণ্টা সম্প্রচার কার্যক্রম ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাসী। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের পাশাপাশি দেশে ৪৫টি বেসরকারি টেলিভিশন, ২৮টি এফএম এবং ৩২টি কমেন্টি রেডিও পরিচালিত হচ্ছে। যার বেশিরভাগ আমাদের সরকার অনুমোদন দিয়েছে। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ এবং অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সমাজ সংস্কারে টেলিভিশন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন, শিক্ষা ও নির্মল বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র মানুষের চিন্তা ও মননে ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র কোনো আঞ্চলিক কেন্দ্র নয়। এটি একটি জাতীয় টেলিভিশন কেন্দ্র। এটি বিটিভির ২য় চ্যানেল, যে চ্যানেলটি সমগ্র দেশে সম্প্রচার হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অগ্রগতি তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, গণমানুষের টেলিভিশন হিসেবে এই কেন্দ্র নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন আরো ৬ কেন্দ্র স্থাপিত করবে। মোট ১০টি চ্যানেল হবে।
বেসরকারি টেলিভিশনের সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশন করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক রীতিনীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রে মানা হয় না। দেখা যায়, কোন জায়গায় আগুন লাগলো, সেই আগুন লাগা থেকে শুরু করে আগুন নেভানো পর্যন্ত অনেক চ্যানেল লাইভ করে। যা কখনো সমীচীন নয়।’
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, বিগত ৫০ বছরে কেউ তথ্যমন্ত্রীর মত কোনো কাজ করেননি। বর্তমানে সংগীত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন। কর্মসংস্থান উপযোগী একটি বিনোদন সেক্টর তৈরি হয়েছে। বর্তমান সরকার চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। ঘটনা ঘটলেই নিউজ তৈরি হয়, বিনোদন তৈরি হয় না। বিনোদন তৈরি করতে বিনিয়োগ দরকার। তাই আমাদের বিনোদন তৈরি করতে বিনিয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো মকবুল হোসেন। উপস্থিত ছিলেন বিটিভি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক নিতাই কুমার ভট্টচার্য, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রমুখ।