বিএনপিকে ঘর গোছানোর পরামর্শ দিলেন তথ্যমন্ত্রী

‘সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছে বিএনপি’

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির কয়েকজন নেতা বক্তব্য দিয়েছেন এ সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলতে হবে। তবে, উনাদের টেনে নামানোর হুমকির মধ্যে প্রায় একযুগ ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার মাসখানেক পর থেকেই তারা আমাদের টেনে নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারকে টেনে নামাতে গিয়েই রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছে বিএনপি।
তিনি বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব যখন বলেন স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতির কথা, তখন হাসি পায়। যারা ইতিহাসকে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে বিকৃতি করেছেন তাদের মুখে এসব শোভা পায় না। আজকে যখন দেশের মানুষ সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে, তখন তাদের গাত্রদাহ হচ্ছে। তারা ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক বানিয়েছিলেন, স্কুলের দপ্তরিকে হেড মাস্টার বানানোর চেষ্টা করেছিলেন। এ ধরনের হাস্যকর বক্তব্য ক্রমাগত না দিয়ে বরং নিজেদের দলকে গুছিয়ে, নিজেদের ঘরটাকে সংগঠিত করার পরামর্শ দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অনলাইনে সংযুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস, কেন্দ্রীয় যুগ্ন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, যুগ্ন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট বাসেত মজুমদার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক ও সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, রতন কুমার রায়, ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, আবু মো. হাশেম প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এ সরকার কখনো পদ্মা সেতু করতে পারবে না। তাদের বলবো, পদ্মা পাড়ে গিয়ে দেখে আসুন। ঢাকা শহরে মেট্টোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেল আগামী বছর চালু হবে, ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রামেও মেট্টোরেল প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নয়, তার অনেক আগেই বাংলাদেশ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হবে। সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়ার মতো বদলে যাওয়ার অগ্রগতির গল্প যদি বিশ^বাসীকে জানান দিতে হয়, শেখ হাসিনাকে একটু সময় দিতে হবে। তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুর সফলতা সেখানেই যেই পাকিস্তান সংশয় প্রকাশ করতো বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ঠিকবে কিনা। সেই পাকিস্তানের মানুষ শুধু নয় তাদের প্রধানমন্ত্রীও আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি দেখে আক্ষেপ করেন। আমরা সামাজিক অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের সমস্ত সূচকে পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছি কয়েকবছর আগে। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর পাকিস্তানের ৭০ বছর, বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের আমাদের তিনভাগের এক ভাগ। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার, পাকিস্তানের ১৮শ ডলারের নিচে। শুধু পাকিস্তানকে নয়, সামাজিক ও মানব উন্নয়ন সুচকে আমরা ভারতে অতিক্রম করেছি অনেক আগে। এই করোনাকালে যেখানে পৃথিবীর মাত্র ২২টি দেশ পজিটিভ ইকোনোমিক জিডিপি গ্রোথ রাখতে সক্ষম হয়েছে তৎমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ভারত-পাকিস্তানের গণমাধ্যমে ঝড় উঠছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করছে। কিন্তু একটি পক্ষ প্রশংসা করতে পারে না। বিএনপি আর তার দোসরেরা দেখেও দেখে না, শোনেও শোনে না, চোখ থাকতে অন্ধ, কান থাকতে বধির।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে রেকর্ড ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, তাকে হত্যা করার ৪০ বছর পর পর্যন্ত কেউ সে রেকর্ড অতিক্রম করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমরা সেই রেকর্ড অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার বহু আগেই বাংলাদেশের সমৃদ্ধির গল্প শুনতো পৃথিবীর মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে তারাই হত্যা করেছিল যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তি। বিজ্ঞপ্তি