বারবার গ্যাস-বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার উপায় কী

Burning gas burner. Blue fire with a red flame.

মহেশখালীতে ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে শুক্রবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় ঘটেছে। বিতরণ কোম্পানির আগাম কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়া হঠাৎ এমন বিপর্যয়ে পর্যুদস্ত হয়েছে চট্টগ্রামবাসী। বেশিরভাগ এলাকা অন্তত ছত্রিশ ঘণ্টা গ্যাসবিহীন ছিল। এই বিপর্যয়ের ফলে দুর্ভোগে পড়ে পূর্বাঞ্চলের অন্তত সাড়ে ১১ লাখ গ্রাহক। এর মধ্যে কর্ণফুলী বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) আওতাধীন চট্টগ্রাম, বাখরাবাদের কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলাও রয়েছে। এমনকি ঢাকার পাশের তিতাসের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জও এই সংকটের মধ্যে পড়ে। এসব জেলায় জাতীয় গ্রিডের পাশাপাশি এলএনজির বড় অংশ সরবরাহ করা হয়ে থাকে । চট্টগ্রাম যেহেতু পুরোটাই এলএনজিনির্ভর, তাই এখানে গ্যাস সরবরাহ একেবারেই বন্ধ ছিল। অন্য জেলায় কোথাও চুলা জ্বলেনি, কোথাও জ্বলেছে কোনোভাবে ।
আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে দিনে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। পাঁচ বছর পরপর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। গত ১ নভেম্বর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটিকে গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষে গত বৃহস্পতিবার মার্কিন এক্সিলারেট টার্মিনালটি চালুর চেষ্টা করা হয়। কয়েকবার চালু করলেও গ্যাস সরবরাহ করা যায়নি। অন্য টার্মিনালটিও বৃহস্পতিবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যাওয়ার কথা থাকায় তা খালি করা হয়। তাই গ্যাস সরবরাহও বন্ধ ছিল। কিন্তু শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রথমটি চালু করতে না পারায় মূলত বিপর্যয় ঘটে। তার সঙ্গে যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডের গ্যাসের চাপ কম থাকা। স্বাভাবিক সময়ে মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে পাওয়া যায় ২৮০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ১ নভেম্বর থেকে ৭০-৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস কম পাওয়া যাচ্ছিল।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কম।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে আছে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল)। নগর, নয়টি উপজেলা ও রাঙামাটির কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী পেপার মিলে গ্যাস সরবরাহ করে এ কোম্পানি। গ্রাহক সংযোগ আছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অন্য খাতে। এসব খাতে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চট্টগ্রামে ছোট-বড় মিলিয়ে ১ হাজার ২০০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
চট্টগ্রামে এমনিতেই গ্যাসের সংকট। এরমধ্যে মহেশখালী থেকে রূপান্তরিত এলএনজি গ্যাস চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলেও তা থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহের কোনো সুযোগ নেই। ফলে এলএনজির সংকট দেখা দিলে তার প্রথম প্রভাব পড়ে চট্টগ্রামে। কিন্তু এভাবে কতদিন চলবে? জ্বালানির যথেষ্ট সরবরাহ না থাকলে অর্থনীতি অচল হয়ে পড়বে। তার প্রভাব পড়বে জনজীবনে। কাজেই সংকট দূরীকরণে স্থায়ী কোনো পন্থা চাই।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, ‘মার্কিন এক্সিলারেট টার্মিনালটি চালু হলে অন্যটি রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যাবে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে সেটি চালু হতে পারে।’
বোঝা যাচ্ছে, মার্চের আগে এলএনজি সরবরাহ বাড়ছে না। কিন্তু এক মার্চে তো জীবন যাবে না। পরবর্তীতে আবার একই সমস্যা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? আমরা যেটি স্পষ্ট করে বলতে চাই তা হলো, টার্মিনাল দুটোর রক্ষণাবেক্ষণের মাঝখানে সময়ের বড় ব্যবধান কি রাখা যায় না?