বাঁশখালীতে হাতি মেরে মাটিচাপা

১৭ দিন পর জানাজানি ৭ বছরে ১৯ হাতির মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁশখালী »

বাঁশখালীর পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পুঁইছড়ি পাহাড়ে ১৭ দিন আগে একটি হাতি মেরে মাটিতে পুঁতে রেখেছে দুষ্কৃতিকারীরা। এ ঘটনায় থানায় সোমবার দুপুরে জিডি করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক আলী নবী, নেছার আহমেদসহ অনেকে বলেন, হাতিটি অনেকদিন আগে কে বা কারা মেরে বান্দরমরা পাহাড়ের সমতল অংশে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়ে ২০ সেপ্টেম্বর বনবিভাগ ও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা এসে হাতিটি মাটির নিচ থেকে উঠান। পরে ময়নাতদন্ত করে আবার ওই স্থানে মাটিচাপা এবং গাছের বিশাল বিশাল ডাল-পালা দিয়ে ঢেকে রেখে দেন।

স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, ওই পাহাড় এবং ধানী জমির মৌরশী সূত্রে মালিক ফরহাদ মিয়া, ফারুক সিকদার, হানে আলম ও মঞ্জুর মিয়া। ওরা বিশাল ওই পাহাড়ি সম্পত্তি স্থানীয় কৃষক জাহাঙ্গীর, দেলোয়ার, আজিমকে বর্গা হিসেবে দিয়েছেন। অভিযোগ উঠেছে জমির মালিক ফারুক সিকদার ও ফরহাদ মিয়া হাতি মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে বনবিভাগ ও প্রাণীসম্পদক কর্মকর্তাদের নানাভাবে প্রভাবিত করছে। এ কারণে ২০ সেপ্টেম্বর ময়নাতদন্ত করা হলেও বাঁশখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর থেকে সোমবার ময়নাতদন্তের নমুনা কুমিল্লা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়নি। বিশাল হাতিটিকে হাতির বাচ্চা উল্লেখ করে বনবিভাগ থানায় জিডি করেছে। এমন কী মৃত হাতিটি মাটির ভিতর থেকে উঠিয়ে ময়নাতদন্ত করারও বিষয় উল্লেখ করেনি এবং হাতিটি মেরে পুঁতে রাখার জায়গার মালিক কারা তাও উল্লেখ করেননি।

বাঁশখালী উপজেলা প্রাণী সম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. মো. তানভীর হোসেন বলেন, প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে কেউ মেরে হাতিটিকে মাটিতে পুঁতে দিয়েছিল। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর বোঝা যাবে হাতিটি কিভাবে মারা গেছে।

পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য বিট কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, হাতিটি কিভাবে মারা গেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে। পুঁইছড়ি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিছুজ্জামান শেখ বলেন, হাতি মৃত্যুর ঘটনাটি জোরালোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। হাতিটি যদি কেউ হত্যা করে থাকে কাউকে রেহায় দেয়া হবে না।

উল্লেখ্য, বনবিভাগের দেয়া তথ্যে জানা গেছে ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে বাঁশখালীর বনাঞ্চলে মারা গেছে ১৯টি হাতি। ৭ বছরে কালীপুর রেঞ্জে মারা গেছে ১২টি বন্যহাতি। জলদী ও পুঁইছড়ি রেঞ্জে ৭টি। অসুস্থ হয়ে পড়া ৩টি হাতিকে সুস্থ করে বনাঞ্চলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ১১ জুন কালীপুর ইউনিয়নের জঙ্গল কালীপুরে গভীর জঙ্গলে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মারা হয়েছে একটি হাতি। এর আগেও জঙ্গল কালীপুরে মৃত হাতির শাবক পাওয়া গেছে। এর ৪ মাস আগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর বাঁশখালী সাধনপুর ইউনিয়নে লটমনি পাহাড়ে ১টি হাতিকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় দুষ্কৃতিকারীরা এবং ১২ নভেম্বর বাঁশখালীর চাম্বল বনবিট অফিসের অদূরে আরও ১টি হাতি মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল।