ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলে কাদের দয়ায়

বাস দুর্ঘটনার পর জানা যায় বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না বা চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। লঞ্চ ডুবির পর জানা যায় লঞ্চের ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না। এটি খুব সাধারণ একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। জনগণও এসব নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। যেমন চট্টগ্রামে প্রায় ৬০ হাজার গাড়ির কোনো ফিটনেস নেই।
এরমধ্যে প্রাইভেট কার, জিপ, বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্যাংক লরি এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। শহরে চলাচলকারী অন্তত ১৫ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন নেই, ফিটনেস সার্টিফিকেটও নেই। এছাড়া ৩৬ হাজার প্রাইভেট কার এবং প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক কাভার্ড ভ্যান এবং কন্টেইনার মুভারের একটি বিশাল অংশেরই ফিটনেস নেই।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিআরটিএ-র হিসেব অনুযায়ী গাড়ির সংখ্যা ৩ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬টি। এর মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেলের কোনো ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। বাকি ১ লাখ ৬২ হাজার ৫১৬টি গাড়ি ফিটনেস সার্টিফিকেটের আওতায় রয়েছে। এসব গাড়ি রেজিস্ট্রেশন করানোর সময় ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়েছে। যেগুলো এক বা দুই বছর পরপর নবায়ন করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে বহু গাড়িই রয়েছে যেগুলো রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নেয়ার পর আর ফিটনেস করাতে বিআরটিএতে আসেইনি। কিছু কিছু যানবাহন প্রথম কয়েক বছর ফিটনেস সার্টিফিকেট নিলেও পরবর্তীতে তারা ফিটনেস ছাড়পত্র নেওয়ার তাগিদবোধ করে না।
গত বুধবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬টি গাড়ির ফিটনেস নিয়মিত রয়েছে। বাকি ৪৫ হাজার ১৩০টি গাড়ির ফিটনেস নেই। এই হিসেব শুধু রেজিস্ট্রেশন করানো গাড়ির। রেজিস্ট্রেশন করানো ছাড়া গ্যারেজ নম্বরসহ নানা পন্থায় শহরে চালানো গাড়িগুলো এই হিসেবের বাইরে রয়েছে। এছাড়া বিপুল সংখ্যক রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজিচালিত অটোরিকশা কোনো ধরনের ফিটনেস ছাড়পত্র ছাড়াই চলাচল করছে।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দর এলাকায় চলাচলকারী বহু ট্রাকের লাইট ওয়েফারতো দূরের কথা, দরজা পর্যন্ত নেই। শুধু ইন্ডিকেটর লাইটই নয়, হেডলাইট জ্বলে না কিংবা একটি জ্বলে এমন গাড়ির সংখ্যা শত শত। বৃষ্টির দিনে ওয়েফার ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে বহু বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান কিংবা ট্যাংক লরি।
বিষয়টি নিয়ে নগর ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, শহরে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল ঠেকাতে পুলিশ প্রতিদিনই অভিযান চালায়। প্রতিদিনই বহু গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জরিমানা করা হয়। তবে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু ফিটনেসবিহীন গাড়ি নগরীতে চলাচল করে বলেও তিনি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গণপরিবহনগুলোতে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যা বেশি।
কিন্তু এই অরাজকতা আর কতদিন চলবে। আর কত প্রাণের ক্ষয় হলে সড়কে বা পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরে আসবে সে প্রশ্নটি আমরা কর্তৃপক্ষকে করতে চাই।