প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার »

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্ব দেশটির ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন।

গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার বিমানবন্দর পৌঁছায়। পরে ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা দেন তারা। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডনাল্ড লু ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তারা মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেন।

এ ছাড়া আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ারসহ আমেরিকার প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সেবায় পরিচালিত নারীবান্ধব কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিও সংস্থা অ্যাকশন এআইডির একটি প্রকল্প কার্যালয়ে কমিউনিটি নেতা, ইমাম, যুবকসহ রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উজরা জেয়াসহ প্রতিনিধিদলের অন্যরা।

মতবিনিময়ে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা মিয়ানমারে তাঁদের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি প্রতিনিধিদলের কাছে হস্তান্তর করেন।

বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল এ সময় রোহিঙ্গাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত, বিভেদে না জড়িয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের ধৈর্য ধরতে বলেন।

প্রত্যাবাসন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) মুখপাত্র মাস্টার মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘চিঠিতে আমরা বাংলাদেশের প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন করে যুক্তরাষ্ট্রকেও তাদের অব্যাহত সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। আমরা যেন নিজ দেশে মর্যাদা নিয়ে একটি সুন্দর এবং টেকসই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিরতে পারি সে ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য দেশটিকে অনুরোধ জানিয়েছি।’

রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা (মাঝি) মোহাম্মদ কামাল বলেন, ‘তাঁরা আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। সহায়তার আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নিজেদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি-বিভেদ না করে প্রত্যাবাসন সফল করার জন্য আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে।’

প্রতিনিধিদলের সদস্যরা মতবিনিময়ের পর ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) পরিচালিত রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারে যান।

বেলা ৩টার দিকে উখিয়া কলেজ লাগোয়া ইউএনএইচসিআর পরিচালিত স্পেশালাইজড হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন।

কক্সবাজার শহরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর বিমানযোগে সন্ধ্যায় তাঁরা ঢাকায় ফিরে যান।

৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ফারুক আহমেদ জানান, প্রতিনিধিদলের সফরকে ঘিরে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ছিল। গোয়েন্দা নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি।