‘প্রকল্পের নামে অর্থের অপচয় করা যাবে না’

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকায় সভা করলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

নগরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক »

‘প্রকল্প গ্রহণের নামে সরকারি অর্থের অপচয় করা যাবে না।’ গতকাল মন্ত্রণালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম একথা জানান।
ইমপেক্ট এবং আউটপুট বিশ্লেষণ করে প্রকল্প নেয়ার তাগিদ দিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প পরিহার করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী আরো বলেন, চট্টগ্রাম দেশের ইকোনমিক হাব হিসেবে পরিচিত। এই শহরটি দেশের আইডল সিটি হবে হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম এই শহরকে কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করার উপায় নেই। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো কতটা কার্যকর হয়েছে তা দেখার প্রয়োজন রয়েছে। যদি কার্যকর না হয় অথবা যাচাই বাছাই না করে গ্রহণ করা হলে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানও সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম খাল ও ড্রেনগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, আপনারা খাল দখল করে অবৈধভাবে বিল্ডিং বানিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছেন। খালের উপর দোকান-পাট বানিয়েছেন। এগুলোর কারণে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে। কিছু মানুষের জন্য কোটি কোটি মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হতে পারে না। এসময় সকল খাল দখলমুক্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।

জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সকল পক্ষকে নিয়ে অনেকগুলো সভা করার কথা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা/দপ্তরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সমস্যা একবারে নিরসন হয়েছে এমনটি দাবি করা যাবে না। তবে অগ্রগতি হয়নি এটি অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
পদবীর দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের বাহিরে নানাবিধ কাজে ব্যস্ত থাকেন। অভ্যন্তরীণ চাপ কমাতে মন্ত্রী-সচিবসহ সংশ্লিষ্ট জনবল নিয়োগ করা আছে দায়িত্ব পালন করার জন্য। পদ-পদবী নিবেন আর কেউ দায়িত্ব নিবেন না, কাজ করবেন না এটা তো হতে পারে না।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে নির্দেশনা দিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা চট্টগ্রামের বড় একটি সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী নিজে সময়ে সময়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়াও হয়েছে। এই সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের অনেক সফলতা আছে।

বর্জ্য বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, বর্জ্য সমস্যা বর্তমানে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গৃহস্থালি বর্জ্যরে পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য, মেডিক্যাল বর্জ্য, নির্মাণ সামগ্রীর বর্জ্যসহ অন্যান্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। আর তা হলো বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। খুব শিগগিরই ঢাকা, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনগুলোতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।
সভায় তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে হবে। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চাকতাই খাল খনন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংসহ সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে তাগিদও দেন তিনি। নগরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়ার কথাও তিনি বলেন।

এদিকে সভায় উপস্থিত থাকা একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান থাকলেও চট্টগ্রামে বৃষ্টি হলে পানি জমে কেন তা ছিল মূল আলোচ্য বিষয়। এবিষয়টি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ যেমন প্রশ্ন তুলেছেন তেমনিভাবে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও কথা বলেছেন। তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে নালা ও খালগুলো পরিচ্ছন্ন না রাখার বিষয়টি। একইসাথে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ যে এলাকায় বাস করেন সেই এলাকার মসজিদেও পানি জমে জলাবদ্ধতা হওয়া এবং ব্যারিস্টার নওফেলের নির্বাচনী এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকা। এবিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, মানুষের দুর্ভোগ যাতে কম হয় সেদিক বিবেচনা করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের প্রকল্পেতো বড় খালগুলো রয়েছে আর ড্রেনের দায়িত্বে রয়েছে সিটি করপোরেশন।

ড্রেনগুলো পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ের কথা সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম বলেন, সিডিএ’র প্রকল্প শেষ হওয়ার পর খালগুলো মেইনটেইন করার জন্য আমাদের বছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে হবে। একইসাথে চট্টগ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে তাদের আয়ের এক শতাংশ দেয়ার কথা ছিল, তা যেন নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে মেয়রের এই বক্তব্যের বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান এর বিরোধিতা করেন। আইনগতভাবে তা আদায় করার কথা তিনি সভায় উল্লেখ করেন। কাস্টমসে জাহাজ এন্ট্রি করার সময় সিটি ট্যাক্স নামে একটি ফি যুক্ত করার কথা তিনি প্রস্তাবনা করেন।

জলাবদ্ধতা কাজ শেষ হওয়ার পর সিডিএ দুই বছরের জন্য মেইনটেইন করবে এমন প্রস্তাবনাও উঠে এসেছে সভায়। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কালুরঘাট পর্যন্ত বছরজুড়ে অব্যাহত রাখার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লা খন্দকারসহ স্থানীয় সরকার বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর/সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা একটি ব্যাপক সমস্যা। জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে তিনটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তারপরও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।