পুলিশ-র‌্যাব পরিচয়ে লাখ লাখ টাকা আদায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, হাটহাজারী »

তিনি পরিচয় দিতেন পুলিশের এসআই, ওসি, এএসপি। কখনো র‌্যাব, বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তা। এভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদানসহ মামলা মোকাদ্দমা দায়েরের হুমকি দিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এক প্রতারক ও তার সহযোগীকে আটক করেছে র‌্যাব-৭।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার রাতে চট্টগ্রামের নাজিরহাট বাজার থেকে দুজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- ফটিকছড়ি থানার বক্তপুর এলাকার মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে মো. বেলাল হোসেন (৩১) ও তার সহযোগী ভুজপুর থানার পশ্চিম সুয়াবিল এলাকার মৃত এজাহার মিয়ার ছেলে মো. ওসমান (৫৩)।

গতকাল দুপুরে র‌্যাবের চান্দগাঁও ক্যাম্পে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, গত ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় মোহাম্মদ খোরশেদুল আলম নামে এক ব্যক্তিকে এসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন প্রকার হুমকি, ভয়ভীতি প্রদান ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে প্রতারক বেলাল। তিনি সরল বিশ্বাসে প্রতারকের দেওয়া নম্বরে ১৬ আগস্ট রাতে ২০ হাজার ৪০০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে প্রতারক থানার ওসি সেজে পুনরায় তার নিকট টাকা চাইলে খোরশেদ আলম গত ১৭ আগস্ট সকালে ৩ হাজার ৬০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করেন। ওইদিনই প্রতারক সার্কেল এএসপি সেজে পুনরায় ভয় ভীতি প্রদর্শন করে ৫০ হাজার টাকা দাবি করলে ১৭ আগস্ট ২৯ হাজার ৫৮০ টাকা বিকাশে প্রেরণ করে। এভাবে খোরশেদুল আলমের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারক বেলাল মোট ৫৩ হাজার ৪০০ টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক পুনরায় র‌্যাবের অফিসার পরিচয় দিয়ে ফোন দেয় এবং জানায় মামলাটি বর্তমানে র‌্যাবের নিকট এসেছে, মামলার বিষয়ে খোঁজখবরের নাম করে তার নিকট পুনরায় টাকা দাবি করে। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে খোরশেদুল আলম র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামকে অবহিত করেন। এরপর র‌্যাব অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পায়।

তিনি আরও বলেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকছড়ি থানার নাজিরহাট বাজার এলাকা থেকে প্রতারক মো. বেলাল হোসেনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অকপটে স্বীকার করেন যে, নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র‌্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে খোরশেদ আলমের নিকট থেকে মোট ৫৩ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করেন।

২০২১ সালের মে মাস থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোকের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একটা প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতেন এবং বিভিন্ন কাজ করে দেওয়ার নামে নানা অজুহাতে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এ প্রতারক স্থানীয় তথাকথিত অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন চ্যানেল হতে বিভিন্ন ক্রাইম ও মামলার খবর, জমিজমার বিরোধের খবর নিয়ে নিজেকে কখনো এসআই বা থানার ওসি, কখনো সার্কেল এএসপি বা এসপি কখনো বা র‌্যাবের অফিসার ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে কথা বলত ও টাকা দাবি করত। টাকা না দিলে কিংবা দিতে দেরি করলে হুমকি দিত।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, এ প্রতারক থানার ওসি, সেকেন্ড অফিসার, মামলার তদন্তকারী অফিসার, পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, সিআইডির কোনো অফিসারের নাম পরিচয়ে মোবাইলে এমনভাবে কথা বলত যে মামলার বাদি, তাদের পরিবার বুঝতেই পারত না। বেলাল নিজে কোনো দিন কারো সঙ্গে দেখা করত না। টাকা নিত বিকাশে এবং বিকাশের দোকানেও যেত না। বিকাশের দোকানকে অন্য নম্বরে সেন্ড করাতে বলত। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন ধরে লোকজনকে প্রতারিত করেছে বেলাল। নিয়মিত প্রাইভেটকার ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে মোবাইলে কথা বলত এবং ফোনের অপর পাশে থাকা ভিকটিমরা তাকে ঊর্ধ্বতন অফিসার মনে করত।

২০২১ সালের মে মাসে সর্বপ্রথম সে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের নিকট হতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে। সে তার বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতজনকে বিভিন্ন পুলিশ অফিসার বা র‌্যাবের পরিচয় দিয়ে ভয় দেখাত। ২০২১ সালের মে মাসে একটি মুদির দোকানের সয়াবিন তেলের ডিলার সেজে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

সর্বশেষ রাউজান থানায় একটি শিশু মারা যাওয়ার ঘটনায় তার বাবার কাছে ময়নাতদন্তের ঝামেলা এড়ানোর কথা বলে ৫ হাজার টাকা আদায় করেছে। গত দেড় বছরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে এভাবে প্রতারণা করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তাদের দুইজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।