পুড়ল ‘৬০০ দোকান’

বঙ্গবাজার দেখেও সতর্ক হয়নি নিউ সুপার মার্কেট

সুপ্রভাত ডেস্ক »

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট অগ্নি ঝুঁকিতে, বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুনের অভিজ্ঞতার পরও ফায়ার সার্ভিসের এই মূল্যায়ন জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা নির্দেশনা মেনে কিছু যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। তবে সেগুলো সংযোজন করার আগেই লেগে যায় আগুন।

এই ঘটনায় তিন তলা ওই মার্কেটটিতে বসানো শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বছর তিনেক আগে যেভাবে তা করা হয়েছে, তা যথাযথ মনে করছে না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

গতকাল শনিবার মার্কেটটিতে আগুন লেগে ব্যবসায়ীদের হিসাবে প্রায় ৬০০ দোকান পুড়ে যাওয়ার পর এই বিষয়গুলো সামনে এসেছে। খবর বিডিনিউজের।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, এক থেকে দেড় সপ্তাহ আগে পরিদর্শনের পর মার্কেটটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। তবে ব্যবসায়ীরা ‘সেই নোটিসে’ খুব গুরুত্ব দিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানা যায়নি।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে আগুনের পর জানা গিয়েছিল, মার্কেটটিকে ২০১৯ সালেই ঝুঁকিপূর্ণ করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এরপর চার বছরে নোটিস করা হয় আরও ১০ বার। ব্যবসায়ীরা কোনো গুরুত্ব দেননি। উল্টো টিনের মার্কেটটি ভেঙে বহুতল মার্কেট করার উদ্যোগ তারা ঠেকিয়ে দেন হাই কোর্টে গিয়ে।

সেই আগুন নিয়ে আলোচনা থামতে না থামতে সকাল পৌনে ৬টার দিকে নিউ মার্কেট ফুটব্রিজ সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে (দক্ষিণ অংশ) আগুন লাগে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনের সূত্রপাত তিন তলায় হলেও পরে তা দোতলাতেও ছড়ায়।

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট (দক্ষিণ অংশ) বণিক সমিতির আহ্বায়ক মারুফ হাসান বলছেন, এই মার্কেটে এক হাজার ৩০০ দোকান রয়েছে। এর মধ্যে আগুনে প্রায় ৬০০ দোকান পুড়ে গেছে। আগুনের তাপ ও আগুন নেভানোর জন্য ব্যবহৃত পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও শ খানেক দোকানের মালামাল।

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার পর কী করেছেন ব্যবসায়ীরা
অগ্নিকা-ের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই মার্কেটটি পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কেটটিতে অগ্নি ঝুঁকি কমাতে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছিল।’

ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট বণিক সমিতির আহ্বায়ক মারুফ হোসেন বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস নোটিস দিছিল। আমরা ধীরে ধীরে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ আগায়ে নিচ্ছিলাম। কিছু জিনিসপত্র কেনাও হয়েছে। তবে পুরোপুরি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।’

নিউ সুপার মার্কেটের দোতলার ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ ফেইসবুকে মার্কেটের নামে একটি পেইজ চালান। দোতলায় তার কাপড়ের দোকান। তিনিও বলছেন, ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহও করেছিলেন তারা।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
নিউ সুপার মার্কেট যখন করা হয়, তখন তা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ছিল না। ব্যবসায়ী আবু ইউসুফ বলেন, ‘আগে মার্কেটটি এমনিই খোলামেলা ছিল। ৫-৬ বছর আগে দোতলার মার্কেটটি এসি করা হয়। পরে দুই বছর আগে নিচতলার মার্কেটটিও পুরোটা এসি করা হয়। তিনতলায় কোনো এসি ছিল না।’

খোলামেলা মার্কেটে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আটকে এসি করায় তা হিতে বিপরীত হয়েছে বলে মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বাহিনীটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলছেন, ‘মার্কেটটির দোকানগুলোর ফ্লোরে প্রচুর পরিমাণে মালামাল স্তূপ করে রাখা হয়। সেগুলো থেকে থেমে আগুন উঠছে, যার কারণে প্রচ- ধোঁয়া হচ্ছে।’

‘কিন্তু সেখানে ভেন্টিলেশনের অবস্থা খুব খারাপ। ব্রিদিং অ্যাপারেটাস (অক্সিজেন সিলিন্ডার-মাস্ক) নিয়েও ভেতরে বেশিক্ষণ থাকতে পারছেন না ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।’

নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলছেন, ‘নিউ সুপার মার্কেটের যে অংশটিতে আগুন লেগেছিল, সেটি কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা জিপসাম বোর্ড দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। আগুন যেখান থেকেই লাগুক না কেন, জিপসাম বোর্ডের কারণে তা দ্রুত পুরো মার্কেটে ছড়িয়েছে।’

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ফায়ার সার্ভিস জানালেও এর অনেতক পরেও ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মইন উদ্দিন বলেন, মার্কেটের ভেতরে কাপড়ে আগুন ধরায় ধোঁয়া হচ্ছে। সেখানে কাজ করতেও বেগ পেতে হচ্ছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে।