পাহাড়কাটা বন্ধে ২২ সরকারি কর্মকর্তাকে বেলা’র আইনি চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার  :

কক্সবাজার জেলায় হঠাৎ করে পাহাড়কাটা বেড়ে যাওয়ায় এবং তা বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি ‘বেলা’। একই সাথে দ্রুত পাহাড়কাটা বন্ধ ও পাহাড়ে নির্মিত সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে অনুরোধ জানিয়ে ৭ সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তর মহাপরিচালক, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পৌর মেয়রসহ ২২ সরকারি কর্মকর্তাকে আইনি চিঠি দিয়েছে ‘বেলা’।চিঠিতে এ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ আগামী ৭ দিনের মধ্যে অবহিত করার জন্যও অনুরোধ জানানো হয়। বেলা’র পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবির ৮ নভেম্বর ডাকযোগে এ চিঠি পাঠান।

চিঠিপ্রাপ্তরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সচিব, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ অতিরিক্ত সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর মহাপরিচালক, স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, গণপূর্ত বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তর-চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক ও কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক, কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি।

বেলা’র এ আইনি চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ২ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যমতে,  কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়কাটার জন্য গত এক বছরে শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কেটেছেন তাঁরা। ফলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাহাড়গুলো রক্ষা করা যায়নি। পরিবেশবিধ্বংসী এসব কাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বড় একটি অংশ রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

৯ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় জানানো হয়, সারাদেশের মধ্যে কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি, ৫৯ হাজার ৪৭১ একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। সারাদেশে দখল হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার একর।

পাহাড়কাটার এ উৎসব মূলত শুরু হয় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ঘুমধুম রেললাইনকে কেন্দ্র করে। রেললাইনের গতিপথে পাহাড় পড়লে তা নির্ধারিত পরিমাপে কাটার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এ সুযোগে যে যেমন পারছে, পাহাড় কেটে মাটিবিক্রির পাশাপাশি জমি সমতল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। অথচ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) কক্সবাজার জেলার সাত উপজেলা নিয়ে করা একটি জনস্বার্থমূলক মামলার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এ নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালী এ সাত উপজেলায় অবস্থিত সকল পাহাড়, টিলা ও পাহাড়িবনকে কোনো ধরনের পরিবর্তন, রূপান্তর ও কর্তন করা যাবে না। করলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

আদালতের এ রকম ঐতিহাসিক ও সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকার পরও বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারির সংকটাপন্ন সময়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে পাহাড়কাটা চলছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ পাহাড়কাটা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কক্সবাজার জেলাকে পাহাড়শূন্য করে তোলার উপক্রম করেছে। ফলশ্রুতিতে পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক ভারসাম্য সম্পূর্ণ হারাতে বসেছে পর্যটনশহর কক্সবাজার। মুলত কর্তৃপক্ষের কঠোর ও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে অব্যাহত পাহাড়কাটার দীর্ঘ প্রভাব হিসাবে পাহাড়ধ্বংস ও প্রাণহানির ঘটনা কক্সবাজার জেলার জন্য বিরল নয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাহাড়কর্তন/ মোচন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাহাড়কাটা বন্ধে আইনের এ বিধানের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ও কার্যকর রাখতে উল্লিখিত মামলা ছাড়াও বেলা একাধিক জনস্বার্থমূলক মামলা দায়ের করে। অর্জিত হয় পাহাড়কাটা বন্ধে একাধিক নির্দেশনা। আদালতের এসব জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পাহাড়কাটা বন্ধ করতে এখনো সক্ষম হয়নি, যা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম অবজ্ঞা ও উদাসীনতার পরিচায়ক। সেই সাথে আদালত অবমাননার শামিলও বটে।