পাহাড়ধস, ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা

পঞ্জিকার হিসাব অনুযায়ী বর্ষা ঋতু শেষের দিকে হলেও এ বছর বৃষ্টির দেখা খুব একটা মেলেনি। মাঝেমধ্যে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি হলেও তা প্রয়োজন বা জনপ্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম।
শেষমেষ শ্রাবণের শেষ পক্ষে কিছুটা ভারী বৃষ্টি হয়েছে নগরে। আর এতেই চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। প্রায় ডুবে যাওয়া নগরীতে ভোগান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাহাড়ধসের আশঙ্কা। ইতিমধ্যে কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বিশ্বকলোনি ও টাইগার পাস সড়কে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। একটি মাইক্রোবাস ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় পাহাড়ের একটি অংশ ধসে পড়ে গাড়িতে। এতে প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও কয়েকঘন্টার জন্য বন্ধ থাকে সড়কটির যান চলাচল।
অন্যদিকে ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে প্রথম পাহাড়ধস হয় বিশ্বকলোনির এইচ-ব্লকের একটি পাহাড়ে শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে। এখানেও আপাতত প্রাণহানির ঘটেনি। ওই স্থান এমনিতেই ঘনবসতিপূর্ণ। পাহাড়ের নিচে, মাঝে ও ওপরে ঝুঁকি নিয়ে বাস করে শত শত পরিবার। স্বল্পভাড়ায় থাকার জন্যই এমন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বাস করে তারা।
এ অবস্থা শুধু নগরে নয়। আনোয়ারা উপজেলায় বিভিন্ন শিল্পকারখানার কারণে উচ্ছেদ হয়ে বৈরাগ ইউনিয়নের বদুলপুড়া গ্রামে এসে আশ্রয় নেয় প্রায় দেড়শতাধিক পরিবার। দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে আসছে এসব পরিবার। ভারী বর্ষণের ফলে যেকোনো মুহূর্তে এখানেও পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে শীঘ্রই অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আশেপাশের বাসিন্দারা।
এই পরিস্থিতি পার্বত্য জেলাগুলোতেও বিদ্যমান। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পাহাড় কাটা চলে এবং সে কাটা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অসংখ্য পরিবারও বসবাস করে। স্বাভাবিক সময়ে এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না প্রশাসন। কিন্তু যখন বর্ষা আসে, কয়েকঘন্টার বৃষ্টিতে যখন প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয় তখনই কেবল তোড়জোড় শুরু হয়। এতে খুব একটা ভালো ফল হয় না। দুর্ঘটনা ঘটার পর শুরু হয় তোড়জোড়। লেখালিখি হয় কাগজে। টিভিতে সংবাদ পরিবেশিত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রকার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। ব্যস ওইটুকুই! পরিস্থিতি যে তিমির সে তিমিরেই থেকে যায়। কার্যত পাহাড়কাটা বন্ধ হয় না। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধ বসতি স্থাপনও থেমে থাকে না।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী বৃষ্টি আরও কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে। কাজেই কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হতে হবে। জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিতে হবে।