পার্ক নয় উন্মুক্ত মাঠের প্রয়োজন বেশি

আমাদের দেশের কর্তাব্যক্তি কিংবা নীতিনির্ধারকেরা উন্নয়ন বলতে শুধু কংক্রিটের দালানকোঠা কেন বোঝেন সে কথা বুঝি না আমরা সাধারণ মানুষেরা। এনারা খালি জায়গা পেলেই তাতে ইমারত গড়ার পরিকল্পনা করেন। আর এর সবকিছুই করেন আবার বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। এভাবে করতে গিয়ে নগরে কোনো খোলা জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি পাকিস্তান ন্যাশনাল স্কাউট জাম্বুরি হয়েছিল চট্টগ্রামে। এর প্রয়োজনে আগ্রাবাদের ডাকাইত্যা বিল মাটি ভরাট করে মাঠ বানানো হয়। সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তান ন্যাশনাল জাম্বুরি। পরবর্তীকালে মাঠটি জাম্বুরি মাঠ নামেই পরিচিত হয়ে ওঠে। পরে মাঠের একপাশে বহুতল কলোনি তৈরির সময় মাঠকে ভাগ করে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হয়। তবে রাস্তা নির্মিত হলেও অনেক বছর মাঠটি অবারিত ছিল। বিশাল হওয়ার কারণে মাঠে একই সময়ে অনেক দল খেলতে পারত। অনুশীলন করতে পারত। সকাল-সন্ধ্যা অসংখ্য নারী-পুরুষ শরীরচর্চাসহ প্রাতঃ ও সান্ধ্যকালীন ভ্রমণ করতে পারত।
জাম্বুরি মাঠটি মূলত গণপূর্ত বিভাগের হলেও তাদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে সিটি করপোরেশন মাঠের একটি অংশ কর্ণফুলী শিশুপার্কের নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়। পার্কের বাইরে বাকি অংশ পড়ে ছিল দীর্ঘদিন। সংস্কার ও দেখভালের অভাবে পুরো মাঠটি একসময় প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছিল। বন্ধ হয়ে পড়েছিল খেলাধুলা ও অনুশীলন। ২০১৮ সালে মাঠের ৮ একর আয়তনের জায়গায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি পার্ক গড়ে তোলা হয়।
এখন আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশু পার্কের অপসারণ চাইছেন স্থানীয়রা। পার্কের বদল মাঠ চাইছেন তারা। নাগরিকরা দাবি করছেন মাঠটি দ্রুত শিশু-কিশোরদের খেলাধূলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার। অভিভাবকেরা বলছেন- আশপাশে উন্মুক্ত খেলার মাঠ না থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। তাদের সুস্থ বিনোদনের জন্য জামুরি মাঠ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা জরুরি। পার্কের নামে সিটি কর্পোরেশন থেকে জায়গা লিজ নিয়ে সেখানে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা প্রচুর হোটেল-রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলার অভিযোগও করেছেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয় সন্ধ্যার পর পার্কটি বখাটেদের আড্ডাখানায় পরিণত হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। পার্কটি ইজারার মেয়াদ শেষের দিকে। আবার নতুন চুক্তি না করে পার্কটি খোলা ময়দানে রূপান্তর করে শিশু-কিশোরদের খেলার উপযোগী করার দাবি জানিয়ে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন সমাবেশ করেছে।
বাংলাদেশে শিশুপার্কের নামে যা হয় তা সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে হয়। সেখানে শিশু-কিশোরেরা গিয়ে অর্থের বিনিময়ে সাময়িক আনন্দলাভ করলেও তাতে শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের কোনো সুযোগ থাকে না। একটি খোলা মাঠে খেলাধুলা বা পারস্পরিক মেলামেশার মাধ্যমে যতদূর হতে পারতো। একটি নগরে যতটুকু খোলা জায়গা থাকে দরকার তা এক চতুর্থাংশও চট্টগ্রামে নেই। সম্প্রতি এই বাস্তবতা অনুধাবন করে সিটি মেয়র সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ গড়ে তোলার। বর্তমান জেলা প্রশাসকও খেলার মাঠের পক্ষে দৃঢ় ভূমিকা পালন করছেন। অতি সম্প্রতি সার্কিট হাউজের সামনে থেকে বাণিজ্যিক শিশুপার্কটি অপসারণ করা হয়েছে। নগরবাসী মনে করে এই ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত শিশুপার্কগুলো অপসারণ করে খোলা মাঠ তৈরি করা হোক। আমাদের শিশুদের দৈনিক ও মানসিক বিকাশের ব্যবস্থা হোক।