পটিয়ায় গহীন পাহাড়ে সক্রিয় সন্ত্রাসীরা

ধরতে পাহাড়ে যৌথবাহিনীর অভিযান

নিজস্ব প্রতিনিধি, পটিয়া »
সন্ত্রাসীদের ধরতে পটিয়ায় গহীন পাহাড়ে যৌথ অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার হয়ে গহীন পাহাড়ে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
একই সময়ে পটিয়া সীমান্তের পার্বত্য চট্টগ্রাম বান্দরবানের সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের একটি টিম অভিযান চালায়। তবে এ অভিযানে সন্ত্রাসীদের কোন আস্তানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় নিয়ন্ত্রণ রাখতে দীর্ঘদিন তিনটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয়। তারা প্রতিনিয়ত পাহাড়ের বাগান মালিক ও কাজে যাওয়া শ্রমিকদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করে থাকে।
১২ এপ্রিল পটিয়া উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার পাহাড় থেকে সন্ত্রাসীরা ১২ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে পরে ছেড়ে দিয়েছে। এরপর র‌্যাব, পুলিশ ও সীমান্তের বান্দরবানের ডলুপাড়া ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বান্দরবান সীমান্তে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ডলুপাড়া ক্যাম্পের মেজর মোহাম্মদ তাহমিদ ও পটিয়া সীমান্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) কবির আহমদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান, র‌্যাব-৭ এর পরিদর্শক নূরে আলম ও পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার। পাহাড়ের চিতাখোলা, চান মিঞার খামার, ভান্ডালজুড়ি খালের মুখ, পুলিক পেট, দামাই ছড়ির মুখ, মেয়র মঞ্জুরুল আলমের খামার ও ভাঙ্গাছড়ি এলাকায় অভিযান চালালেও সন্ত্রাসীদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি শীত মৌসুম এলেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পেয়ারা, লেবু, আদা চাষি ও দিন মজুরদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। কেলিশহর, হাইদগাঁও, শ্রীমাই, খরনা এলাকার শত শত কৃষক গহীন পাহাড়ে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করে আসছিলেন। কেলিশহর ইউনিয়নের পাহাড় থেকে মো. হারেছ, সরওয়ার উদ্দিন, সাকিব, জাহেদসহ ১২ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে চাইলদাছড়ি এলাকায় আটকে রেখে সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত টাকা আদায়ের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। পাহাড়ের ত্রিপুরা পাড়া, লেবুঝিড়ি পাড়া, চাকমা পাড়া, রাঙ্গুনিয়া কমলাছড়ি, মগপাড়া, হিলচিয়া, বুদবুদি ছড়া, শ্রীমাই আগা, অগ্নিছড়া, আমতলী ঘোনা, চান মিঞার খামার, পাইনছড়ি, ধোলাই পাড়া, খরনা কোর্ট, হাতির পাইক এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে।
পটিয়া বন বিভাগের হেডম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কারণে এলাকার কৃষক ও স্থানীয়রা প্রতিদিন ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। শীত মৌসুম এলেই পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এলাকার লোকজনকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে থাকে। তাছাড়া পটিয়া সীমান্তের ধৌপাছড়ি ও ডলু খাল এলাকা হয়ে এসব সন্ত্রাসীরা সরকারি গাছ কেটে দিনে ও রাতে পাচার করে থাকে।
নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক উপজেলার কেলিশহর এলাকার এক লেবু চাষী জানিয়েছেন, কেলিশহর ইউনিয়নের পাহাড়ে শত শত কৃষক চাষাবাদ করলেও অস্ত্রধারী সংন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা আতংকে থাকেন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকের যোগাযোগ রয়েছে। এদের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা ও লেবু চাষিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করা হয়। এদের চিহ্নিত করা জরুরি।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীরা এলাকার কৃষক ও সাধারণ লোকজনকে অপহরণ এবং মুক্তিপণ আদায় করছে, বিষয়টি প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। যার কারণে র‌্যাব, পুলিশ ও পটিয়া সীমান্তের বান্দরবানের ডলু ক্যাম্পের সেনাবাহিনীর টিম একই সময়ে অভিযান পরিচালনা করেছে। তবে সন্ত্রাসীদের আস্তানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অভিযান চলমান রাখা হবে বলে জানান তিনি।