নোয়াখালী-মিরসরাই নদীপথে ভাসানচর ছাড়ছে রোহিঙ্গারা!


  • চার দফায় আটক ৬২

  • মালয়েশিয়া নেয়ার কথা বলে দালালরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ছেড়ে দেয়

  • আদালতের মাধ্যমে পুনরায় ভাসানচরে পাঠানো হচ্ছে আটকদের


রাজু কুমার দে, মিরসরাই »
নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে নদীপথে মিরসরাই হয়ে পালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। স্বজনদের টান ও দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা পালাচ্ছে বলে জানা গেছে। চার দফায় ৬৭ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে এলেও ৬২ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদের মধ্যে নারী ২৪ জন, শিশু ২৭ ও পুরুষ ১১ জন। এছাড়া ৩ জন দালালকে আটক করা হয়েছে। তবে আদালতের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গাকে পুনরায় ভাসানচরে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩১ মে উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এলাকায় একটি চায়ের দোকান থেকে ৩ জন দালালসহ ১০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। এদের মধ্যে ৭ জন নারী ও ৩ জন শিশু রয়েছে। গত ২২ জুন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুপার ডাইকের উপর থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জন নারী, ৫ জন শিশু ও ৫ জন পুরুষ রয়েছে। চলতি মাসের ১১ জুলাই একই এলাকা থেকে ১৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে ৮ নারী, ৪ পুরুষ ও ৬ জন শিশু রয়েছে। তবে আরো ৫ জন রোহিঙ্গা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ঝাউবনে পালিয়ে যায় বলে জানায় স্থানীয়রা।
গত ১৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের একটি সড়ক থেকে ২০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদের মধ্যে রয়েছে ৫ নারী, ৪ পুরুষ ও ১১ জন শিশু। এদের সবাই দালালের মাধ্যমে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে ট্রলারযোগে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এসেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে আটককৃতদের অনেকে উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশে ভাসানচর ছাড়ে। পরে দালালরা এদের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ছেড়ে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের বোট ক্লাব থেকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে করে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের মাধ্যমে নোয়াখালীর ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের কাজ শুরু করে সরকার। পরে কয়েক দফায় ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়। সরকারের লক্ষ্য রয়েছে ১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা। ইতিমধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২৫০টি বেশি গরু ভাসানচরে পাঠায় সরকার। রোহিঙ্গারা কেন ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে তার কোন সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আটককৃত একাধিক রোহিঙ্গা জানিয়েছেন তাদের অনেক স্বজন কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে থাকায় স্বজনদের টানে তারা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা এনজিও সংস্থা ‘অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলমগীর জানান, রোহিঙ্গারা মূলত দালালের খপ্পরে পরে ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসছে। তাই এদের উপর আরো বেশি নজরদারি দেয়া দরকার।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের উপসচিব মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা জানান, কিছু রোহিঙ্গা দালালের খপ্পরে পরে মালয়েশিয়া যাওয়ার আশায় নদীপথে ভাসানচর থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ইতিমধ্যে আদালতের নির্দেশে আটককৃত কিছু রোহিঙ্গাকে পুনরায় ভাসানচরে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা জেলে রয়েছে।