তিন ফ্লাইওভার: নিরাপত্তার ঝুঁকি ও অপরিকল্পিত ক্রসিংসহ নানা সমস্যা

বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, দেওয়ানহাট ওভার পাস ও কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার

শুভ্রজিৎ বড়ুয়া »

নগরের বড় ফ্লাইওভারগুলোর পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারসহ কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার এবং দেওয়ানহাট ওভারপাস। যান চলাচলে এ ফ্লাইওভারগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও এতে রয়েছে বিভিন্ন জটিলতা। এসব জটিলতা নিরসনে নিরাপত্তার কথা স্পষ্ট করলেও বাকি বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বরে ৯২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারসহ চারটি ফ্লাইওভার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) হস্তান্তর করা হয়। অন্য তিনটি হলো- ১৪৭ কোটি টাকার এম এ মান্নান ফ্লাইওভার, ৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকার কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার এবং ২৪ কোটি টাকার দেওয়ানহাট ওভারপাস (ফ্লাইওভার হিসেবে পরিচিত)। এরমধ্যে সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দেওয়ানহাট ওভারপাস।

ফ্লাইওভার তিনটিতে যান চলাচল বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, দেওয়ানহাট ওভারপাসে যান চলাচল সবসময় বেশি থাকে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন বুঝে নেওয়ার পর থেকে একবার ফ্লাইওভারটিতে তারা সংস্কার কাজও করেছে। এছাড়া কদমতলী-দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে নিরাপত্তাজনিত কারণে যান চলাচল সন্ধ্যার পর থেকে কমে যায়। এ ফ্লাইওভারের ওপরে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বরতরা সিসিটিভি ক্যামেরার চেয়ে বড় সমস্যা মনে করছেন ফ্লাইওভারে পর্যাপ্ত লাইট না থাকাটা। আর এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের মূল প্রতিবন্ধকতা হলো একটি অপরিকল্পিত ক্রসিং। তবে এটি নিয়ে কোনো কিছু বলতে নারাজ দায়িত্বশীলরা।

ফ্লাইওভারে চলাচল প্রসঙ্গে সিএনজি অটোরিকশা চালক আকাশ মজুমদার বলেন, ‘ফ্লাইওভার হওয়াতে আমাদের জ্যামে পড়তে হয় না। অনেক কম সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারি। কিন্তু পুরোনো রেলস্টেশনের (কদমতলী) ফ্লাইওভারটাতে সন্ধ্যার পর যাওয়াটা রিস্ক। ওখানে ছিনতাইকারীদের কারণে চলাচল করা যায় না।’

ফ্লাইওভারের নিরাপত্তা নিয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের পাটোয়ারী বলেন, ‘এই ফ্লাইওভারে বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই ছিনতাইয়ের ঘটনা বন্ধ করতে নিয়মিত এই ফ্লাইওভারে পুলিশি টহল রাখা হয়। কিন্তু ওখানে একটা লাইটও থাকে না। অন্ধকার যেখানে, সেখানে অপরাধের ঘটনাতো ঘটেই। কিন্তু ওখানের ছিনতাইকারীরা লাইটগুলো নষ্ট করে দেয় বলে সমস্যা বেশি হয়। গত একবছর ধরে ওখানে লাইট নেই।’

নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) কামাল হোসাইন বলেন, ‘ফ্লাইওভার সবগুলোই তো ইফেক্টিভ। তবে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের যে লুপটা বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালের দিকে নামানো হয়েছে, ওটা আরও চওড়া হলে শিল্প-কারখানার গাড়িগুলো চলাচল করতে পারতো। এখন ওই অংশটা ন্যারো হওয়ায় গাড়িগুলো ফ্লাইওভারের নিচে চলাচল করে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়। আর ওপরে একটা ক্রসিং থাকায় আমাদের সদস্যদের ওখানে (ফ্লাইওভারের ওপরে) যানজট নিরসনে কাজ করতে হয়।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মানিক বলেন, ‘আমরা বুঝে নেওয়ার পর থেকে সবগুলো ফ্লাইওভারই ঠিক আছে। মাঝে কয়েক বছর আগে দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারে কিছু সংস্কার কাজের প্রয়োজন হয়েছিল। কারণ ওই ফ্লাইওভারে যান চলাচল সবচেয়ে বেশি হয়। তাই আমরা তখনই সংস্কার করেছিলাম। অন্য ফ্লাইওভারগুলো এখনও ঠিকঠাক আছে।’

এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ফ্লাইওভারে কোনো ক্রসিং থাকে না। কিন্তু এখানে খুব ন্যারো (সংকীর্ণ) করে একটা ক্রসিং রাখা হয়েছে। ওটা তারা কোনো বিশেষ প্রয়োজনে হয়তো করেছে। তাই ওটা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। আর যে অংশটা এখন ন্যারো আছে, ওটা চাইলেও এখন বড় করা সম্ভব নয়। তাই সিডিএ আমাদের যেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরা সেভাবেই এই ফ্লাইওভারগুলো ব্যবস্থাপনা করছি।’