নিজস্ব শিপইয়ার্ডে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করবো: প্রধানমন্ত্রী

সুপ্রভাত ডেস্ক :
যুদ্ধ না চাইলেও দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে গতকাল সকালে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে (বিএনএ) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মিডশিপম্যান-২০১৮ ‘আলফা’ এবং ডিইও-২০২০ ‘ব্রাভো’ ব্যাচের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ-২০২০ এ যুক্ত হয়ে তিনি এই কথা বলেন। খবর : বিডিনিউজের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব সময় লক্ষ্য, আমাদের দেশটা স্বাধীন দেশ, বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে এবং আমরা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার সব রকম প্রস্তুতি নেব। কিন্তু কারও সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়- এই পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আমরা চলব। আমরা শান্তি চাই, যুদ্ধ চাই না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেন সব ধরনের উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ থাকে, সেভাবেই আমরা আমাদের প্রতিটি বাহিনীকে গড়ে তুলছি।’
১৯৭৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন- যে জাতি নিজেকে সম্মান করতে পারে না, আত্মমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, সে জাতি দুনিয়ায় কোনোদিন বড় হতে পারে না। সেজন্য আজকে আমরা আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট জাতি হিসেবে, আত্মমর্যাদা নিয়ে বাস করতে চাই। আমরা অন্য কারও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না, অন্য কেউ আমাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক তাও আমরা সহ্য করব না- আমরা এই নীতিতেই বিশ্বাসী। জাতির পিতার এই নির্দেশটা সব সময় মেনে চলতে হবে। আমাদের নবীন অফিসার তোমরা জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলবে। তিনি জাতির জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর ভূমিকার কথা স্মরণ করে বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে আসার পর খুলনা শিপইয়ার্ড নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের যে ডকইয়ার্ড সেটাও, ড্রাই ডকইয়ার্ড, চট্টগ্রামে এবং নারায়ণগঞ্জে, সেটা আমরা নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেই। লক্ষ্য হল, আমাদের নিজস্ব শিপইয়ার্ডে আমরা যুদ্ধজাহাজও তৈরি করব এবং যার কাজ ইতিমধ্যে আমরা কিছু কিছু শুরুও করেছি।’
কক্সবাজারের পেকুয়াতে সাবমেরিন ঘাঁটি হচ্ছে জানিয়ে বিশাল সমুদ্র সম্পদকে যেন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
জাতির পিতাকে হত্যার দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকারে এসে আওয়ামী লীগ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি নৌ, বিমান, সেনাবাহিনীসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে উন্নত-সমৃদ্ধ করতে উদ্যোগ নেয় বলে জানান তিনি। অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
কোভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে মুজিববর্ষে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করতে পারলেও জনগণের কল্যাণে বেশকিছু কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ আমরা প্রায় ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। ইনশাল্লাহ প্রত্যেকটা ঘরে আমরা বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারব, আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দেব। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, এটাই আমাদের নীতি। সেই নীতিমালা অনুসরণ করে সরকার বাংলাদেশের প্রত্যেকটা এলাকায় যারা ভূমিহীন, গৃহহীন তাদেরকে সরকারিভাবে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তিতে বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষের ঠিকানা হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই মুজিববর্ষ পালনের সব থেকে বড় উদ্যোগ, যা আমাদের দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করবে, আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে।’
মহামারী মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে এই ভাইরাস যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকার যেসব নির্দেশনা দিয়েছে সেগুলো মেনে চলার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। সেই লক্ষ্য নিয়েও আমরা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিয়েছি, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। আমরা ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যে ব-দ্বীপ, এই ব-দ্বীপ অঞ্চলটা কিভাবে উন্নত হবে, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধররা অর্থাৎ আজকে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছে, তারা ভবিষ্যতে কিভাবে সুন্দর জীবন পাবে, সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই এই পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।’
২০৪১ সালে যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে আজকের নবীন কর্মকর্তারা তখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হবেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই এদেশের ২০৪১ অর্জনের ক্ষেত্রে আপনারা সৈনিক হিসেবে কাজ করবেন। দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’