নগরে অপরাধ ঘটনার নেতৃত্বে ২২-২৫ গ্রুপ

পুলিশের তথ্য

সক্রিয় ৬০০ ছিনতাইকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীতে দিন দিন বেড়েই চলছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সময় ও যুগ পাল্টানোর সাথে সাথে তাদের অপরাধের ধরণও বদলেছে। ছিনতাই করার সময় তারা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রায় ২২ থেকে ২৫টি গ্রুপ। যেসব গ্রুপের সক্রিয় সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছেন নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। সদস্যদের মধ্যে ১৬ থানায় ৬০৩ ছিনতাইকারী এখনো মাঠপর্যায়ে তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে শনাক্ত করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
টানা তিন মাস অনুসন্ধান শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে এ তালিকা। এতে রয়েছে প্রভাবশালী উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও।
নগরীর গোয়েন্দা পুলিশের সবশেষ তালিকা অনুযায়ী, ১৬ থানায় বর্তমানে ২২ থেকে ২৫ টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছেন। এসব গ্রুপের ৬০৩ ছিনতাইকারী এখনো মাঠপর্যায়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে সক্রিয় রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের তালিকাসূত্রে জানা যায়, নগরীর ১৬ থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিনতাইকারী রয়েছে বন্দর ও সবচেয়ে কম রয়েছে ডবলমুরিং থানায়।
তালিকামতে কোতোয়ালি থানায় ৫০ জন, সদরঘাট থানায় ২২ জন, চকবাজার ২৯ জন, বাকলিয়া থানায় ৬৫ জন, পাঁচলাইশ থানায় ২৯ জন, চান্দগাঁও থানায় ৫৮ জন, খুলশী থানায় ৫৭ জন, বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ৪২ জন, ডবলমুরিং থানায় ৬ জন, হালিশহর থানায় ১১ জন, পাহাড়তলী থানায় ৩০ জন, আকবরশাহ থানায় ৬৮ জন, বন্দর থানায় ৭১ জন, ইপিজেড থানায় ৩৮ জন, পতেঙ্গা থানায় ১৬ জন ও কর্ণফুলী থানায় ১১ জনসহ মোট ৬০৩ জন ছিতাতাইকারী রয়েছে।
গত ৩ মাসে নগর গোয়েন্দা পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ১০০ এর বেশি ছিনতাইকারীকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এ ৬০৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছে অনুসন্ধানকারী দল।
পুলিশ জানায়, ছিনতাইকারীরা সময়ের সাথে তাদের ধরন পরিবর্তন করেছে। তারা কখনো যাত্রী বেশে, কখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সেজে, কখনো রিকশা বা গাড়িচালক সেজে পথচারীদের টার্গেট করে। তাছাড়া বিমানবন্দর, বিভিন্ন ব্যাংক এটিএম বুথের গ্রাহকদের টার্গেট করে নানা কৌশলে তারা সক্রিয় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাইয়ের বিভিন্ন ঘটনার সাথে নগরীর বিভিন্ন সম্ভান্ত পরিবারের সন্তানও উচ্চশিক্ষিত তরুণরা জড়িয়ে পড়ার তথ্য বের হয়ে আসছে পুলিশের এ অনুসন্ধানে।
পুলিশের মতে, বিশেষ করে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানরা বা উচ্চশিক্ষিত তরুণরা তাদের মাদকের খরছ জোগাড় করার জন্য ছিনতাইয়ের এসব ঘটনার সাথে জড়িয়েছেন। এ ধরনের অন্তত ২০ তরুণকে শনাক্ত করেছেন মহানগর গোয়েন্দা বিভাগ।
নগরীতে ছিনতাইকারীদের সক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন উপকমিশনার (গোয়েন্দা) নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেন, ছিনতাইকারীরা সাধারণত পথচারীদের নিরিবিলি স্থানকে টার্গেট করে। এরপর সুযোগ পেলে তারা কৌশল ব্যবহার করে পথচারীদের সবকিছু ছিনিয়ে নেয়।
মাদকের টাকাসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত খরচ মেটাতে তারা এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া পুলিশের অভিযানের ফলে অনেক ছিনতাইকারী তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের পথ থেকে সরে এসেছে। আর যারা এখনো রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
২২ থেকে ২৫টি গ্রুপের সক্রিয়তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে জরিপ চালিয়ে এসব গ্রুপের তথ্য পেয়েছি। তবে গ্রুপের সংখ্যা কমতেও পারে আবার বাড়তে পারে। কারণ অনেক সময় অপরাধীরা অপরাধ কর্মকাণ্ড ত্যাগ করে।
অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ২৫০ জন ছিনতাইকারী নতুন করে তালিকায় এলেও ২০০ এর বেশি পুরাতন ছিনতাইকারীর কোন ধরনের হদিস মিলছে না। তাছাড়া এখনো কারাগারে রয়েছে ১৫০ জন ছিনতাইকারী। কারাগারে থাকা ছিনতাইকারীদের সর্বনিম্ন পাঁচটি থেকে সর্বোচ্চ নয়টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।