দুঃসময়ের অবসান হোক : শান্তির ঝরনাধারায় সজীব হোক দেশ

গেলো বছরের বিষাদ সময় দুঃখ শোকের ক্যানভাস ছড়িয়ে বিলীন হয়ে গেলো মহাকালের গর্ভে। নববর্ষ ১৪২৮ আমাদের দ্বারে উপস্থিত। বিগত বছরটিতেও নববর্ষের আবাহন ছিলো সীমিত পরিসরে, করোনাকালের লকডাউনে অতিবাহিত হয়েছে। এবারও নববর্ষের প্রথম দিনটি থেকে লকডাউন শুরু হচ্ছে। ‘আমাদের পৃথিবীর গভীর, গভীরতর অসুখ এখন’। অজ¯্র ক্রন্দন নিয়ে জাতি একটি বছর পেরিয়ে এলো। এই পুরো এক বছর করোনা প্রায় ১০ হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। মানুষের বিপদে বিপন্নতায় যারা সম্মুখ সারিতে থেকে যোদ্ধার ভূমিকায় ছিলেন, সেই সব চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, র‌্যাব, সশস্ত্রবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে কর্মীদের প্রাণদান তাঁদের মহত্বে অভিষিক্ত করেছে। বিগত বছরে করোনায় আমরা রাজনীতিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিত্রশিল্পী, সংগীত শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী, চলচ্চিত্র শিল্পীসহ শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গন ও সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হারিয়েছি। যাদের মৃত্যু সৃজনশীলতা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে জাতিকে দরিদ্র করেছে। প্রতিটি মানুষের মৃত্যু তাঁর স্বজনদের শোকের সাগরে ভাসিয়েছে। করোনা এখন আরো প্রাণঘাতি হয়েছে। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, সচেতন না হলে এই মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না।
বিগত বছরটি দুটি গৌরবময় ঘটনায় জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ। একটি জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ, অন্যটি আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। সম্প্রতি দেশের এই দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ এই দুই উপলক্ষে দেশবাসীকে অভিনন্দিত করেছেন।
গেল বছরটিতে জাতিসংঘের একটি সিদ্ধান্ত আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে আর তাহলো, নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ঘোষণা। করোনার বিপর্যয়ের মধ্যেও আমাদের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে, রেমিটেন্স বেড়েছে, পোশাক শিল্প সমস্যা-সংকট কাটিয়ে উঠছে, কৃষক-চাষি-শ্রমজীবী মানুষের অদম্য কর্মস্পৃহা জাতিকে সকল বিপদ মোকাবেলায় সাহস যোগাচ্ছে।
এবার নববর্ষের দিন থেকে পবিত্র রমজান শুরু হচ্ছে। মানুষ যাতে শান্তিপূর্ণ ও সুস্থিরভাবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্ম-কর্ম করতে পারে তা সংশ্লিষ্ট সকলকে নিশ্চিত করতে হবে। জনজীবন নিরাপদ রাখা, দ্রব্যমূল সহনীয় রাখতে এই সময় সরকারকে সচেষ্ট হতে হবে।
নতুন বছরটিতে আমাদের সমাজ অর্থনীতি সকল বিপদ কাটিয়ে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু করুক, করোনার বিষাদ জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে সচেতনতার সাথে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাবে-নববর্ষে এই হোক আমাদের সম্মিলিত প্রার্থনা। সব দুঃসময় পার করে আমরা এগিয়ে যাবো সম্মিলিত সাহস, শক্তি আর প্রেরণা নিয়ে। বিপন্ন রোগাক্রান্ত একটি মানুষ যেন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধায় আরো বরাদ্দ দিন, রোগে শোকে মানুষের ভরসার স্থল হাসপাতাল, সেখানে যেন কোনো কিছুর ঘাটতি না থাকে। করোনা থেকে বাঁচবার উপায় স্বাস্থ্যবিধি পালন, টিকা গ্রহণ। দেশের মানুষকে দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে। টিকাদান কার্যক্রম কোনোভাবেই যেন ব্যাহত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
নববর্ষ সকলের জীবনে সুখ-শান্তি আর সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক, আমাদের এই বিষাদ সময়ের দ্রুত অবসান হোক, স্বাস্থ্যবিধি পালন আর জীবনের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশবাসী সুরক্ষিত থাকুক। নববর্ষে দেশবাসীকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাই।