দীঘিনালায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ

মো. আবদুর রহমান, দীঘিনালা »

দীঘিনালায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করেছে চাষিরা। এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। কম সময় ও স্বল্প অর্থ ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অপার।

কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনায় এখানকার জমিতে চাষ হয়েছে সূর্যমুখী ফুলের।
বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে আরো বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

৩নং কবাখালী ইউনিয়নের দক্ষিণ মিলনপুর গ্রামে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ এবং মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। আর তাতে কৃষকের জমি হয়ে উঠেছে এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।
এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে এ চাষ করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলার ২০ জন কৃষক সাড়ে ৬ একর জমিতে প্রণোদনার প্রকল্পের আওতায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা শুরু করেছেন।

এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ২০ জন কৃষক সুবিধাভোগী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খামারে আসছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন। বর্তমানে একঘেয়েমি তামাক চাষ করে কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হচ্ছেন না। তামাক চাষ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় সেই টাকার তামাক পাওয়া যায় না।
সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের সর্বনি¤œ বাজার মূল্য ২৫০ টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।

এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।

৩নং কবাখালী ইউনিয়নে কৃষক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ৪০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত লোকজন ছুটে আসছে। বিকেল বেলায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসেন এ সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেতে, ফুলের পাশে ছবি তুলেন এবং আনন্দঘন সময় কাটান অনেকে। তা দেখে আমার খুবই আনন্দ লাগে।’

‘ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশাকরি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে আগামী বছর আরও জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরামর্শ দিই। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘আশা করছি চাষ করা জমিগুলোতে ভালো ফলন হবে। আগামীতে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ আরও সম্প্রসারিত হবে। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আমি আশাবাদী।’