দাম বেঁধে দিলেই কি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে

বাজারে বাড়তে থাকা দামের লাগাম টানতে নতুন করে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বেঁধে দিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার এই তিন পণ্যের দাম ঠিক করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বেশ কিছুদিন ধরে এই তিন পণ্যের দামে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এখন থেকে খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮-এর ক্ষমতাবলে দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এত দিন আমরা কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিইনি। আজই (বৃহস্পতিবার) প্রথম তা করে দিলাম। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই তা করা হয়েছে। আশা করছি এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।’
পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়া নতুন নয়। আগে কয়েক দফায় ভোজ্যতেল ও চিনির দাম বেঁধে দিলেও তা কার্যকর করতে পারেনি সরকার। এই ব্যর্থতার জন্য বেশ অনেকবারই বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়েছিল। তাই ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, কীভাবে নতুন দাম কার্যকর করা হবে, তার কোনো কৌশল সরকারের নেই।
আমরা অতীতেও বেশ কয়েকবার দেখেছি সরকার যতবারই বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে ততবারই তার উল্টো ফল ঘটেছে। শুধু রাজনৈতিক সরকারের বেলায় ঘটছে তা নয়। ১/১১ সরকারের আমলেও চালের দাম নিয়ে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল। বাজারে যখন অভিযান চলে তখন এক চিত্র, অভিযান শেষ হলে পরিস্থিতি পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে আসলে কী করা যায় তা নিয়ে জাতীয়ভাবে আলোচনা হওয়া উচিত। কারণ সততা ও আন্তরিকতা না থাকলে ব্যবসায়ীদের আইন দিয়ে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তৎক্ষণাৎই কার্যকর হয় অথচ দাম কমার সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে হতে আবার দাম বাড়ার ঘোষণা চলে আসে। এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে সরকার।
তাছাড়া আমাদের দেশে অধিকাংশ পণ্যের উৎপাদনখরচও বেশি। যেমন এই সময়ে বিশ্ববাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ৫.৬১ টাকা, আর দেশে তা ১২ টাকার ওপরে। বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য দাম ঠিক না রাখলে ভারত থেকে ডিম আমদানির হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। এতেও কোনো কাজ হবে বলে মনে হয় না। যদি হয় তো ভালো। না হলে কী হবে তার কোনো উল্লেখ নেই সরকারি নির্দেশনায়।